রেলের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের জেরে ভাঙচুর করে ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিল আন্দোলনকারীরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত বিহার। জানা গিয়েছে, রেলওয়ে নিয়োগ বোর্ডের ২০২১ সালের নন-টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটেগরির পরীক্ষার এখনও ফল প্রকাশ না হওয়ায় মঙ্গলবার থেকেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ছাত্র-চাকরিপ্রার্থীরা। এদিন গয়া স্টেশনে একটি ট্রেন ভাঙচুর করে ইঞ্জিন ও কয়েকটি কামরায় আগুন লাগিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের সামাল দিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অবরোধ করা হয়েছে আরাহ ও কলকাতা-নয়া দিল্লি মেইন লাইনও।
ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ট্রেন লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়ছেন। ভেঙে দিচ্ছেন ট্রেনের জানালা। এরপরই দেখা যায়, বেশ কিছু বিক্ষোভকারী ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন। ট্রেনে আগুনের খবর পেয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ও আরপিএফ। বিক্ষোভকারীদের সরাতে লাঠিচার্জ শুরু করা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ধুন্ধুমার বাধে। এদিন সকালে পটনার রাজেন্দ্র নগর টার্মিনালেও কলকাতা-নয়া দিল্লি মেইন রেলওয়ে লাইন অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা।
অন্যদিকে, দমকল বাহিনীও ঘটনাস্থলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জ্বলন্ত ট্রেনের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। বিক্ষোভের জেরে একাধিক ট্রেনের রুট বদল করে দেওয়া হয়েছে। শেষ খবর অনুযায়ী, বর্তমানে পুলিশ রেললাইন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরাতে পেরেছে। বিক্ষোভে জড়িত থাকায় সোমবার চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রেলওয়ের নন-টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটেগরির পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারিই প্রথম ধাপের কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানেই দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে জালিয়াতি বলেই দাবি বিক্ষোভকারীদের।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও সিবিটি ২ পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। ২০১৯ সালের রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েও নতুন কোনও আপডেট পাওয়া যাচ্ছে না। সেই পরীক্ষার ফলও প্রকাশ করা হয়নি। পরীক্ষার্থীদের সময় নষ্ট করা হচ্ছে এইভাবে। তাদের দাবি, সিবিটি ২ পরীক্ষা যেন অবিলম্বে বাতিল করা হয় এবং আগের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
কেবল পটনা বা গোয়া নয়, গোটা বিহার জুড়েই বিক্ষোভ চলছে। জেহানাবাদে বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি রেলওয়ে ট্রাকে এনে জ্বালিয়ে দেয় এবং সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। অন্যদিকে, সীতামারহি রেলস্টেশন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরাতে শূন্যে গুলি চালাতেও হয় পুলিশকে। পটনা, নাওয়াদা, মুজাফ্ফরপুর, বক্সার ও ভোজপুর জেলাতেও বিক্ষোভ চলছে বলে জানা গিয়েছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রেল অবরোধ করে রাখা হয় বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্যজুড়ে হিংসা, বিশৃঙ্খলার ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবারই রেলওয়ে বোর্ডের তরফে আপাতত নন-টেকনিক্যাল পপুলার বিভাগ ও লেভেল-১ পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পরীক্ষার্থীদের যাবতীয় বক্তব্য শোনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উত্তীর্ণ ও অনুত্তীর্ণ-দুই পক্ষেরই বয়ান শোনার পর ওই কমিটি রেলমন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে।
রেলমন্ত্রকের তরফে অপর একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা ভাঙচুর ও বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত, তারা রেলওয়ের চাকরি পাবেন না। বিহারের আরাহ জেলায় একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Be the first to comment