‘একটা প্রবল ঝাঁকুনি, দু’বার ব্রেক কষেছিলাম…’ ট্রেনের চালকের কথায় উঠে এলো বিভৎসতা

Spread the love

একটা ঝাঁকুনি অনুভব করেছিলেন। কিন্তু সে মুহূর্তে পিছনের দিকের বগিগুলিতে কী হয়েছে, তা সামনে থেকে তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি। বিপদ বুঝে এর্মাজেন্সি ব্রেক কষেছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার সময়ের বিবরণ দিলেন বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের  লোকো পাইলট।

কাটিয়ারে বৃহস্পতিবার সকালে ১১. ৩০ মিনিটে কাজে যোগ দিয়েছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের লোকো পাইলট প্রদীপ কুমার। এদিন সাংবাদিকদের সামনে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন তিনি। ঘটনার পর থেকে কেটে গিয়ে প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা। দুর্ঘটনাস্থলেই রয়েছেন তিনি। দফায় দফায় তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। রেলমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁর। দফায় দফায় তাঁকে নিয়েই চলছে তদন্ত।

অভিশপ্ত সময়টার বর্ণনা দিচ্ছিলেন লোকো পাইলট প্রদীপ কুমার। তিনি বলেন, “তখন ১৬টা বেজে ৫২-৫৩ মিনিট হবে। আচমকাই একটা ভীষণ ঝাঁকুনি অনুভব করি। তারপরই এর্মাজেন্সি ব্রেক কষি। পিছনে কী হচ্ছে, আমার পক্ষে জানাটা সম্ভব ছিল না। যখন দেখি, তখন পিছনের ৬ চাকা লাইনচ্যুত হয়েছিল। কারণ আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। ট্র্যাকশন মোটর খোলা ছিল কিনা, সেটা জানা আমার পক্ষে কোনওপক্ষেই সম্ভব নয়।”

তিনি বলেন, “কী হয়েছে আর কী হয়নি, সেটা এখন তদন্তের পরই জানা যাবে। ট্র্যাকশন মোটর আগেই খোলা ছিল কিনা, সেটা তদন্তেই জানা যাবে।” ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রেলের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। চালকের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্তকারীরা। কথা বলেছেন রেলমন্ত্রী স্বয়ং।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আমি নিজে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেছি। আচমকা যান্ত্রিক ত্রুটির জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেক্ষেত্রে যে ইক্যুইপমেন্টগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলি সংগ্রহ করে ভাল করে খতিয়ে দেখা হবে। সেখানে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু চিহ্নও পাওয়া যেতে পারে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনার শিকড়ে গিয়ে তদন্ত করা হবে।”

তবে তিনি এও বলেছেন, “এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারি না। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লোকো পাইলটের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে কিনা, সেগুলি দুর্ঘটনাগ্রস্ত বগি থেকে যন্ত্রাংশগুলি খুলে বার করলেই বোঝা যাবে। ”

দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে এক জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত ৪৩ জন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত, এখনও চলছে উদ্ধারকার্য। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রীরা। তাঁদের একাংশ ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে, রেলের নিম্নমানের বগিগুলিকেই বাংলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। দুর্ঘটনার পিছনে রেলের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন তিনি। পাশাপাশি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*