দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ভদ্রমহিলার। কথা বলতে পারছেন না, কেঁদে ফেলার প্রায় আগের মুহূর্ত। হাত তুলে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বারবার কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আর উল্টো দিকে একদল মারমুখী মানুষ। আঙুল উঁচিয়ে গালাগালি ছুটছে, ছুটছে হুমকি। দুয়েক জন হাতও তুলছেন বারবার, মারবেন বলে। আর ততই সিঁটিয়ে যাচ্ছেন ওই মহিলা। অসহায় হয়ে পড়ছেন ক্রমশ।
বিনোদিনী স্কুলে এক ছাত্রীর যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠা পরে এমনই একটি ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই মহিলার ‘অপরাধ’, তিনি বিনোদিনীর শিক্ষিকা। পরে স্কুলেরই চার ছাত্রী উদ্ধার করেন ওই শিক্ষিকাকে। এই সাহসি কাজের জন্য আগামী মাসে বীরাঙ্গনা পুরস্কার পেতে চলেছে ওই চার ছাত্রী।
এক বছর আগের ছায়াই যেন দেখছে শহর। স্থান-কাল-পাত্র হয়তো আলাদা, কিন্তু ঘটনার গঠনে এবং অভিঘাতে ততটাও ফারাক নেই। জিডি বিড়লা স্কুলে অভিযোগ উঠেছিল, চার বছরের এক শিশুর যৌন হেনস্থা করেছে শিক্ষক। অভিভাবকদের বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল গোটা স্কুল। শুধু অভিযুক্ত শিক্ষক নন, রোষের শিকার হয়েছিলেন স্কুলের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাই। উঁচু ক্লাসের ছাত্ররাও ছাড় পায়নি। অভিযোগ উঠেছিল, স্কুলের গায়ে ‘চাইল্ড অ্যাবিউজ়ার ফ্যাক্টরি’ লিখে পোস্টার সেঁটেছেন অভিভাবকেরা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে যাওয়া-আসাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জিডি বিড়লার ঘটনায় সাধারণ মানুষ দেখেছিল, অশ্রাব্য গালাগালি ছুটছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লক্ষ করে। দেখানো হচ্ছে চটি-জুতো। রীতিমতো হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে তাঁদের। প্রশ্ন উঠেছিল, প্রতিবাদ যতই জরুরি হোক, তার এই উদ্ধত রূপ কি কদর্য নয়? বাবা-মায়েদের এই মারমুখী চেহারা কি অপ্রত্যাশিত নয়? স্কুলের ছাত্রীরা প্রশ্ন তোলে, এত বছর ধরে যে শিক্ষিকারা পড়াচ্ছেন এত যত্ন নিয়ে, তাঁদের কি এভাবে হেনস্থা করা উচিত? ঘটনাটি যতই নিন্দনীয় হোক, তার দায় কখনওই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার উপর বর্তাতে পারে না।
একই কথা বলছে বিনোদিনী। অভিভাবকদের ক্ষোভের মুখে প্রহৃত হতে বাকি ছিল শিক্ষিকা রূপা ভট্টাচার্যের। চার জন ছাত্রী এগিয়ে গিয়ে প্রায় উদ্ধার করে তাঁকে। অয়ন্তিকা প্রামাণিক, ইন্দ্রানী দাস, তনুশ্রী প্রসাদ এবং পৌলমী সিংহ নামের ওই চার ছাত্রীকে বীরাঙ্গনা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ। সূত্রের খবর, ২০ নভেম্বর সল্টলেকের একটি প্রেক্ষাগৃহে ওই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে তাদের হাতে।
Be the first to comment