চার বছর ধরে যে ভাবে এখানে কার্নিভাল হচ্ছে তাতে তাক লাগিয়ে দিয়েছি। এ কথা বলতে গেলেই আমার গায়ে কাঁটা দেয়। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে একথাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে সব করতে পারি। পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠান থেকেই আগামী বছরের পুজোর প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সামনের বার আরও ভালোভাবে কী করে করা যায় ভাবতে শুরু করুন।
উল্লেখ্য, দু’দিন আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে কার্নিভালে ডেকে নিয়ে গিয়ে অপমান করেছে রাজ্য সরকার। আলাদা মঞ্চে বসিয়ে তাঁকে চার ঘণ্টা ধরে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল। আর সেই প্রসঙ্গেই এদিন নাম না করে রাজভবনের দিকেই তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, আমি সমালোচনাকে গ্রহণ করি। সেটা যদি আলোচনার মধ্যে দিয়ে হয়। আমি ন্যারেটিভকে মানি না। নেতিবাচক কোনও কিছুকে আমি বিশ্বাস করি না। এ প্রসঙ্গে পেয়ারাবাগানের বাটাম ক্লাব আর চেতলার কোলাহল ক্লাবের উদাহরণ দেন মমতা। বলেন, দেখবেন গিয়ে বাটাম ক্লাবের পুজো। কী সুন্দর করে ওরা। কোলাহল ক্লাবও তাই। বড় ক্লাবের থেকে কম যায় না। ছোট ক্লাব বলে দেখব না এটা হয় না। ‘এ’-র চোখ দিয়ে ‘এ’-কে দেখতে হবে, ‘বি’-র চোখ দিয়ে ‘বি’কে। ‘সি’-র চোখ দিয়ে ‘ডি’কে দেখলে হবে না আবার ‘ডি’-র চোখ দিয়ে ‘এফ’কে দেখলে হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও বলেন, ইউনেসকো এই কার্নিভালকে স্বীকৃতি দিয়েছে। একদিন সারা পৃথিবী বলবে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আমি মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা করি, মাগো তুমি একটু করে এগিয়ে দাও।
এছাড়াও এদিন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপির আধা বাঙালির মন্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, আমি কি আধা বাঙালি না আধা মারোয়াড়ি ৷ এই প্রশ্নটা কি ঠিক? আমি বললাম মায়ের কোনও জাত হয় না। কোনও ধর্ম হয় না ৷ বর্ণ হয় না ৷ কেউ কেউ বাংলা সংস্কৃতিকে উচ্ছেদ করে নিজেদের গুঞ্জন গাইতে শুরু করেন, তখন খারাপ লাগে ৷ আমি এখনও বলি, নাসা থেকে ভাষা শীর্ষে বাংলা।
এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক এবছর কারা পেলো বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান ২০১৯
সেরার সেরা পুরস্কার পেয়েছে ২৭টি পুজো ৷ সেরার সেরা- বড়িশা ক্লাব, চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সংঘ, কালীঘাট মিলন সংঘ, নাকতলা উদয়ন সংঘ, একডালিয়া এভারগ্রিন, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, চক্রবেড়িয়া, ত্রিধারা সম্মিলনী, বেহালা নূতন দল, হিন্দুস্তান পার্ক সর্বজনীন, টালা প্রত্যয়, আহিরীটোলা সর্বজনীন, কাশীবোস লেন সর্বজনীন দুর্গোৎসব, দমদম তরুণ দল, ৯৫ পল্লি, খিদিরপুর ২৫ পল্লি, বেহালা এসবি পার্ক, অবসর, সমাজসেবী, মুদিয়ালি, শিবমন্দির, হাতিবাগান সর্বজনীন, বকুলবাগান, বালিগঞ্জ কালচারাল, বাঘাযতীন তরুণ সংঘ, ৪১ পল্লি।
সেরা মণ্ডপ: রাজডাঙা নবউদয় সংঘ, উল্টোডাঙা তেলেঙ্গাবাগান ও নতুনদল ৷
সেরা প্রতিমা: সেলিমপুর পল্লি, কালীঘাট মিলন সংঘ ও যোধপুর পার্ক শারদীয়া দুর্গোৎসব।
সেরা আলোকসজ্জা: হিন্দুস্তান ক্লাব সর্বজনীন, কলেজ স্কোয়ার, সিংহি পার্ক, সিমলা ব্যায়াম সমিতি।
সেরার সেরা সাবেকি পুজো: সঙ্ঘশ্রী, কুমারটুলি সর্বজনীন, বাগবাজার সর্বজনীন, বডিগার্ড লাইন আলিপুর, মানিকতলা চালতাবাগান ও আদি বালিগঞ্জ ৷
বিশ্ববাংলা বিশেষ পুরস্কার: দক্ষিণ কলকাতা সর্বজনীন, শিবপুর মন্দিরতলা সাধারণ দুর্গোৎসব, ৭৮ পল্লি চেতলা দুর্গোৎসব, ৭৪ পল্লি, গোলমাঠ ভবানীপুর, কোলাহল, যুবমৈত্রী, বাটাম ক্লাব, ২২ পল্লি ভবানীপুর, ফরওয়ার্ড ক্লাব, চোরবাগান, স্বাধীন সংঘ ও ৬৬ পল্লি, বরাহনগর নেতাজি কলোনি লো-ল্যান্ড, হরিদেবপুর নিউ স্পোর্টিং ক্লাব, টালা বারোয়ারি, গল্ফগ্রিন শারদোৎসব কমিটি, ৬৪ পল্লি, সন্তোষপুর অ্যাভিনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল, ফতেপুর দুর্গোৎসব কমিটি, নিউ পাড়া দাদাভাই সংঘ বরাহনগর, ২১ পল্লি ৷
সেরা পরিবেশবান্ধব: বাঘাযতীন বি অ্যান্ড সি ব্লক, পূর্বাচল শক্তি সংঘ, সন্তোষপুর লেকপল্লি ৷
সেরা ঢাকেশ্রী: বাগবাজার সর্বজনীন
সেরা ব্র্যান্ডিং: আলিপুর সর্বজনীন।
সেরা থিম সং: সুরুচি সংঘ ৷
Be the first to comment