সবেমাত্র চেন্নাই থেকে উড়ে আসা বিমান ল্যান্ড করেছে তুতিকোরিন বিমানবন্দরে। নামার জন্য তৈরি যাত্রীরা। এমন সময়ই ওই বিমানে থাকা এক তরুণী স্লোগান দিতে শুরু করলেন বিমানের মধ্যেই। “ফ্যাসিস্ত বিজেপি সরকার ডাউন ডাউন।” পিছনে দাঁড়িয়ে তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি তামিলিসাই সুন্দরাজন। অভিযোগ, বিজেপি সভাপতিকে উদ্দেশ করেই স্লোগান দিচ্ছিলেন ওই তরুণী। টার্মিনালে নামা মাত্রই ধরল পুলিশ। এবং বিজেপি সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ত’ বলার ‘অপরাধে’ গ্রেফতার করে ১৫ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হলো ওই তরুণীকে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে।
কে এই তরুণী?
কানাডায় পাঠরতা বছর ২৮-এর এই তরুণীর নাম লয়েস সোফিয়া। কানাডা থেকে চেন্নাই হয়ে তুতিকোরিনে আসছিলেন তিনি। চেন্নাই বিমানবন্দরে মেয়েকে আনতে যান সোফিয়ার বাবা-মা’ও। চেন্নাই-তুতিকোরিন ইন্ডিগোর ওই বিমানে ছিলেন তাঁরাও। সোফিয়ার বাবা এএ সামি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ডাক্তার। তিনি জানান, “আমার মেয়ে বিমানের মধ্যেই স্লোগান দেয়। এরপর টার্মিনালে আসা মাত্রই ওই ভদ্রমহিলাকে (বিজেপি সভাপতি) নিতে আসা জনা দশেক লোক আমাদের ঘিরে নেয়। মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। বচসা শুনে বিমানবন্দরে কর্মরত পুলিশকর্মীরা এগিয়ে আসেন। গোটা ঘটনা শুনে আমাদের থানায় নিয়ে যায়। পরে আমার মেয়েকে গ্রেফতার করে ১৫ দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।”
তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি তামিলিসাই সুন্দরাজন বলেন, “একটি ইনোসেন্ট মেয়ে বিমানের ভিতরেই চিৎকার করতে থাকে- ফ্যাসিস্ত বিজেপি সরকার ডাউন ডাউন। প্রথমবার বিষয়টা আমার কানে এলেও আমি এড়িয়ে যাই। এরপর ধারাবাহিকভাবে একই কথা বলতে থাকে বারবার। আমি ভেবে দেখি, যে মেয়ে সরকারকে ফ্যাসিস্ত বলছে সে সন্ত্রাসবাদী ছাড়া আর কিছু নয়। এবং যে ফ্যাসিস্ত শব্দ ব্যাবহার করছে সে ইনোসেন্টও নয়।” এরপরই তুতিকোরিন বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুন্দরাজন। রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান, জনসমক্ষে হেনস্থা সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে গণিত এবং পদার্থবিদ্যা নিয়ে কানাডায় গবেষণারত এই ছাত্রীকে।
গোটা ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডিএমকে সভাপতি এমকে স্ট্যালিন। করুণানিধি পুত্র সোফিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি টুইট করে লেখেন, “বিজেপি বিরোধীতা করলেই যদি পুলিশ গ্রেফতার করে তাহলে কত লক্ষ মানুষকে পুলিশ গ্রেফতার করবে? আমি আবার বলব- ফ্যাসিস্ত বিজেপি সরকার ডাউন ডাউন।”
কথা বলার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নতুন নয়। বিরোধীরা প্রায়ই বলেন, বিজেপি বা আরএসএস-এর বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে দেশদ্রোহী কিংবা চিন-পাকিস্তানের দালাল বলে দেগে দেওয়া হয়। অগাস্টের শেষ সপ্তাহে পাঁচ বাম বুদ্ধিজীবী তথা সমাজকর্মীকে গ্রেফতারের পর একই কথা উঠেছিল। এখনও তাঁরা আদালতের নির্দেশ গৃহবন্দি। এর মধ্যেই সোফিয়াকে গ্রেফতারের ঘটনা তামিলনাড়ু তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিতেও তোলপাড় ফেলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ।
Be the first to comment