একদিকে সিবিআই প্রধানের অপসারণ ঘিরে লাগাতার বিরোধী-খোঁচা, অন্যদিকে শীর্ষ আদালতে অযোধ্যা মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়া, সব মিলিয়েই যথেষ্ট চাপে রয়েছে বিজেপি সরকার। সেই চাপ আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ বুধবার নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে রাফালে যুদ্ধবিমানের দাম সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশদে জানাতে হবে কেন্দ্রকে। সিল করা খামে লিখিত আকারে সেই নথি জমা দিতে হবে শীর্ষ আদালতে।
ফ্রান্সের থেকে মোট ৩৬টি যুদ্ধবিমান কিনেছে কেন্দ্র। কিন্তু ‘অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট’-এর শর্ত দেখিয়ে সেই দাম সংসদেও জানানো হয়নি। গত মাসেই রাফাল-চুক্তি সংক্রান্ত তথ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল কোর্ট। কেন্দ্রের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, চুক্তির নথি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং গোপনীয়। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত আগের কোনও চুক্তির নথিও আদালতে বা সংসদে প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তাই নথি জমা দেওয়া হবে না। তখন আদালত জানায়, গোপন ও রণকৌশলগত বিষয়গুলি প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ওই চুক্তি সংক্রান্ত তথ্যের যতটুকু জনসমক্ষে আনা সম্ভব, ১০ দিনের মধ্যে সেটা জানাতে হবে। না হলে, হলফনামা দিয়ে সরকারকে জানাতে হবে যে তারা দাম জানাতে পারছেন না।
রাফালে চুক্তির দাম সংক্রান্ত নথিপত্রের পাশাপাশি অনিল অম্বানীর সংস্থা কীভাবে বরাত পেল, সেই সংক্রান্ত নথিও চেয়েছে শীর্ষ আদালত। আগের শুনানি হয়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বেঞ্চে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বেঞ্চ উল্লেখ করেছে, ‘‘আমরা চাই রাফালের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া এবং দাম একটি সিল করা খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা দিক কেন্দ্র। দশ দিনের মধ্যেই এই তথ্য ও নথিপত্র জমা দিতে হবে।’’
রাফালে চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছিলেন দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা ও অরুণ শৌরি। সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। কী ভাবে চুক্তিতে অনিল অম্বানীর সংস্থা যুক্ত হল সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। সেই মামলার শুনানিতেই প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, রাফালের প্রযুক্তিগত তথ্য বা রণকৌশলগত গোপনীয় নথি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না আদালত। শুধু চুক্তির প্রক্রিয়া, তার দাম নির্ধারণ এই সংক্রান্ত নথিই চাওয়া হচ্ছে।
রাফালের দাম নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তথ্য চাওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন অস্ত্র পেয়ে গেছে কংগ্রেস। সামনেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এমনিতেই রাহুল গান্ধী কটাক্ষ করেছেন রাফাল-আতঙ্কে ভুগছে মোদী সরকার। তাঁর অভিযোগ, সিবিআই প্রধান অলোক বর্মাকে সরানোর পিছনেও রয়েছে রাফাল সংক্রান্ত দুর্নীতি। সেই নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন অলোক, তাই তাঁকে সরানো হল। দিন কয়েক আগে, ইনদওরেও আক্রমণাত্মক হয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি। তাঁর দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রী সব আইন ও নিয়ম ভেঙে অনিল অম্বানীকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। আর এখন ভয় পেয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইছেন। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘খুব সম্ভবত ফ্রান্সেও রাফালের তদন্ত শুরু হবে।’’
Be the first to comment