চলতি মাসের ২১ তারিখ বীরভূম জেলার বগটুই গ্রামে নৃশংস নরহত্যা হয়েছিল। সব মিলিয়ে শিশু, মহিলা সহ মোট ৯ জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এই ঘটনার পর শুধু রাজ্যই নয়, গোটা দেশ জুড়ে আলোচনা শুরু হয়। ঘটনার সামনে আসার পর রাজ্য সরকার দ্রুত সিট গঠন করলেও, সিটের তদন্তে আস্থা না রাখতে পেরে বগটুই কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
বগটুই ইস্যুকে হাতিয়ার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার এবং তৃণমূলকে চাপে ফেলতে চাইছে বিজেপি। বগটুইয়ের ঘটনার পর বিজেপির একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তবে বগটুই যাওয়ার পথে রাস্তায় সিমেন্ট বোঝাই লরি থামিয়ে বিজেপিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। এবার সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে বগটুই কাণ্ড নিয়ে রিপোর্ট পেশ করলে বিজেপি। বিজেপির পেশ করা ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ রিপোর্টে সাংসদ ব্রিজলাল, সত্যপাল সিং, কেসি রামামূর্তি, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও জাতীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষের সই রয়েছে।
কী লেখা আছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টে?
বাংলায় তৃণমূলের শাসনে মাফিয়ারা পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজত্ব করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
রাজ্যের যে সব নাগরিকরা আইনের শাসন মেনে চলতে চান, সরকারের ওপর তারা সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়েছেন।
বগটুই গ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে, তা রাজ্য সরকার অনুমোদিত তোলাবাজির পরিণাম ছাড়া আর কিছুই না। গুন্ডা ট্যাক্স, কাটমানি, তোলাবাজির ফলে এই ঘটনা ঘটেছে।
বিজেপির অনুসন্ধানকারী দল কলকাতা ফিরে আসার পরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যাওয়ার পথে বিজেপি প্রতিনিধি দলকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল এবং তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনীর বিজেপির দলকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশের কোনও অফিসার বা আধিকারিক আমাদের উদ্ধার করতে আসেননি। আমরা ডিজিপির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।
আমরা জানতে পেরেছি বগটুইয়ের পাশবিক ঘটনার সময় এসডিপিও ও ইন্সপেক্টর অব পুলিশ ঘটনাস্থলের সামনেই উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। আততায়ীদের আগুন লাগানোর থেকেওই তাঁরা বাধা দিতে পারেননি। তারা পদক্ষেপ নিয়ে অনেকগুলি প্রাণ বেঁচে যেত।
সেই গ্রামের সাধারণ মানুষরা ভয়ে আছেন। এনএইচআরসি, জাতীয় মহিলা ও শিশু কমিশন ও তাদের সদস্যরা সেখানে গিয়ে বগটুই গ্রামের গিয়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির চেষ্টা করেছিলেন।
আমাদের সুপারিশ যে পশ্চিমবঙ্গে অল ইন্ডিয়া সার্ভিসের যে সব অফিসাররা কাজ করছেন তাদের সাংবিধানিত দায়িত্ববোধ তাদের মনে করানো প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ তাদের কড়াভাবে সতর্ক করা।
বিজেপি প্রথম থেকেই বগটুই কাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছিল। এবার এই ইস্যুকে হাতিয়ার করেই জাতীয় রাজনীতিতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে চাইছে বিজেপি, এমনটা মত রাজনৈতিক মহলের।
Be the first to comment