সহেলী কাল স্কুল যাবেনা। ক্রাফ্ট এর খাতা তৈরী হয়নি। যেসব জিনিস কিনতে হবে তা কেনা সম্ভব নয় বাবার পক্ষে। সত্যিই খুব গরীব তারা। বাড়ি বাড়ি কাগজ ফেরি করেন সহেলীর বাবা সুশীল বাবু। মা তনুকা পুরোনো কাগজ দিয়ে ঠোঙা বানান। সহেলীদের ক্রাফ্ট এর বিষয় “গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান। ” এর পাশাপাশি “জল ধরো জল ভরো” নিয়েও একটা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আসলে সহেলী ছোটবেলা থেকেই শুধু পড়াশোনা নয় আঁকা, গান, বিতর্ক প্রতিযোগিতাতে প্রাইজ আনে। কিন্তু এখন আর টানতে পারছেন না সুশীল বাবু। সুতরাং কাল স্কুলে যাবেনা সহেলী। মন খারাপ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। সহেলীর মনের কোণেও জমাট অন্ধকার।
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। তনুকা দরজা খুললেন। ডাকলেন সহেলীকে। ওমা এ যে সুহিতা। সহেলীদের ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। কলকল করে উঠল সুহিতা। কিরে কালকের ক্রাফ্ট তৈরী তো! না, অস্ফুটে বলে সহেলী। আমার পক্ষে ক্রাফ্ট এর উপকরণ কেনা সম্ভব নয়। বাবাকে চাপ দিতে পারবো না, বলে সহেলী। ধূর এটা কোন ব্যাপার হলো? আমার তো মার্বেল পেপার, ক্রেপ পেপার, ডেকোরেটিভস সব এক্সট্রা কেনা আছে, তুই নিস; বলে সুহিতা। কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও সুহিতার জেদাজেদীতে রাজি হয় সহেলী।
পরের দিন দুজনেই পাশাপাশি বসে। জমা দেয় প্রজেক্ট। বিকেল চারটের সময় রেজাল্ট বেরোবে। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করে সহেলী, প্রথম যেন সুহিতা হয়। রেজাল্ট নিয়ে মিতালি ম্যাম আসেন। এবার বলবেন। চোখ বন্ধ সহেলীর। তৃতীয় হয়েছে সংহিতা, দ্বিতীয় সৌরা,আর প্রথম সহেলী। চোখ ফেটে জল আসে সহেলীর। ভগবান তুমি এত নিষ্ঠুর। কিন্তু একি দেখছে ও। সুহিতা খুব জোরে হাততালি দিচ্ছে। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল তাকে পুরস্কার নিতে। গাল ভরা হাসি নিয়ে বলল I am proud of you friend.
Be the first to comment