রাতে যেন ঝড় বয়ে গেছে । গত বিকেলেও যে বিল্ডিংয়ে ছিল প্রাণোচ্ছ্বলতার ছাপ, তার সামনেই চাপা উৎকণ্ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন বাসিন্দারা। বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে কালো ধোঁয়ার ছাপ । চারপাশ দমকলের জলে ভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে। এরই মাঝে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে পৌঁছেছে ফরেনসিক টিম । পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার পরেই বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাদের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
গতরাতে এয়ারলাইনস বিল্ডিংয়ের পাশে ৩১ নম্বর গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের একটি আটতলা ভবনের একতলায় আগুন লেগে যায়। মুহূর্তে ধোঁয়ায় ভরে যায় চারপাশ। আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে উপরের দিকেও। বিল্ডিংয়ের উপরে থাকে প্রায় ৫০টি পরিবার। প্রথমে নিচের দিকে নামাতে চেষ্টা করছিলেন জাহানারা বেগম, আব্বাসউদ্দিনরা । কিন্তু ঘন কালো ধোঁয়ায় বিপদের গন্ধ পেয়ে তাঁরা ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই ল্যাডারের মাধ্যমে বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান দমকল বাহিনী এবং ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের সদস্যরা। দমকল বাহিনীর মুন্সিয়ানায় ঠেকানো যায় আরও এক স্টিফেন কোর্টের স্মৃতি। তবে তারই মাঝে আতঙ্কিত হয়ে ছাদ থেকে ঝাঁপ দেয় এক নাবালক। ঘরের মাঝে বাথরুম থেকে উদ্ধার হয় এক বৃদ্ধার দেহ। রাতেই দমকল বাহিনীর চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ভোররাতে পুলিশ কুকুর নিয়ে আসা হয় তল্লাশির জন্য। অন্যদিকে নিয়মমতো দমকল বাহিনীর সদস্যরা জল দিয়ে বিল্ডিংয়ের কুলিং প্রসেস চালাতে থাকেন । আজ সকাল সাতটা পর্যন্ত কুলিং প্রসেস চলেছে ৷ বিল্ডিংটি পুরো ঘিরে দেওয়া হয়। এখনও পুলিশের সদস্যরা বিল্ডিংটি ঘিরে রেখেছেন। আজ সকালে ফের ৬ তলা থেকে বের হতে দেখা যায় ধোঁয়া। তাতে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। যদিও দমকলের একটি ইঞ্জিনের চেষ্টায় সেই ধোঁয়া বন্ধ করা গেছে ।
উৎকণ্ঠার রাত শেষে সকালে নিজেদের সুখী গৃহকোণে যেতে চাইছেন বিল্ডিংয়ের মানুষজন । ঘরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে প্রবল আকুতি। কিন্তু পুলিশের সাফ কথা, সব স্বাভাবিক হতে হবে । আগুন লাগলে অনেক সময় এই বিল্ডিংয়ের ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। পৌরনিগমের ইঞ্জিনিয়ররা সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন । পাশাপাশি ইলেকট্রিকাল শর্ট সার্কিটের জেরে এই আগুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে হলেও, ফরেনসিক টিম পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে । বিল্ডিংয়ের নিচে কীভাবে এত দাহ্য বস্তু মজুত থাকল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Be the first to comment