রাজিত বন্দোপাধ্যায়
সিনি , ঝারখন্ড
হাফ গার্ল ফ্রেন্ডের শুরু হওয়া টা আর দেখতে পেলনা তারা । তাদের দেখার চাড়ও নেই । আগেই আইনক্সে দেখে এসেছে সহেলী । কেবল মাত্র প্রসেনজিৎ- এর একান্ত অনুরোধে এসে পড়েছে সে । একটা বক্স কেবিন বুক করেছে প্রসেনজিৎ । দেদার পয়সা ওদের । বাড়ির প্রত্যেকেই নাকি ব্যবসায়ী !
বক্স কেবিন ভাড়া করার মানেটা আজ আর সহেলীর কাছে ততটা চমকের নয় । এই বক্স কেবিনে অবশ্য প্রথম যেদিন প্রসেনজিৎ তাকে নিয়ে এসেছিল , সিনেমা শুরু হবার মিনিট দশেক পরে চমকে উঠেছিল সে । প্রসেনজিৎ-এর হাত কামিজের কাফতান হাতার ফোকর গলে তার বুকের ভিতর সেঁধিয়ে পড়েছে ! সে চিৎকার করতে গিয়েও কিন্তু থেমে গিয়েছিল । কিন্তু সেটাই যে কাল হয়ে উঠবে , তখন প্রেমের নেশায় বুঝতে পারেনি সহেলী । এমন কি যৌন সম্ভোগেও আর বাধা দিতে পারেনি সে । বাড়ির চক্ষু এড়িয়ে চলেছিল অনেক দিন ধরে প্রসেনজিৎ- এর বক্স কেবিন প্রেম । তারপর… !
— কিন্তু তুমি আমার সঙ্গে এভাবে ব্যবহার করতে পারোনা জিৎ ।
রাগে দুঃখে প্রায় ফেটে পড়ে সহেলী ফোনে । অপর পারে প্রসেনজিৎ- এর গলা কিন্তু স্থির । সে আর সহেলীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবে না ।
— কিন্তু তুমি আমায় বিয়ে করবে বলেছো জিৎ , কথার খেলাপ হবে না প্রতিজ্ঞা করেছিলে ।
প্রসেনজিৎ অটল , সে তার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চায়না ! কিন্তু কেন ? সহেলীর এই প্রশ্নের জবাবে সে ঋতুজাতিকার কথা বলতে পারে না । বাড়ির লোকেরা বলেছে তার সাথে বিয়ে দেওয়া হবে তাকে । বড় ব্যবসায়ী বাড়ির কেবল ডাকসাইটে সুন্দরীই নয় সে , আধুনিকাও বটে । যেমন টি প্রসেনজিৎ মনে মনে চায় । সহেলীর প্রেম তো তার কাছে ক্যাজুয়াল !
রান্নাঘরে রাখা কেরোসিনের বোতলটা হঠাৎ নজরে পড়তে উদ্ভ্রান্তের মত সেটা গলায় ঢেলে ফেলল সহেলী । হ্যাঁ , সে মরতে চায় পরিবারের লোকজনদের সে বলতে পারেনি প্রসেনজিৎ-এর কথা । কীভাবে মুখ দেখিয়ে সে বাঁচবে ! নাঃ সে মরতে চায় , সত্যিই সে আজ মরতে চায় । কিছুক্ষণ পরেও সে মৃত্যু না আসতে দেখে চঞ্চল হল সে । পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে রাখা ব্লেড টা তুলে নিল সে । তারপর … !
— সহেলী ও সহেলী খাবিনে ?
মায়ের চিৎকারের পর চিৎকারে সহেলী না আসায় তার বাবা খাবার টেবিল থেকে উঠে এসেছিল তার মান ভাঙ্গাতে । অন্ধকার ঘরে হঠাৎ পায়ের তলায় আঠার মত চটচটে কী যেন পায়ে লাগতে চমকে উঠলেন সুদীপ বাবু । হাতড়ে লাইট টা জ্বলে হঠাৎ গা হিম করা একটা চিৎকারে প্রায় লুটিয়ে পড়তে লাগলেন সুদীপ ।
বনবন কোরে ঘোরা পাখাটার আওয়জটা আবছা ভাবে কানে আসতে চোখ চেয়ে সহেলী দেখল সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে । এক তীব্র আক্ষেপ তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল , সে এখনও মরেনি ! নার্স হঠাৎ সেই আওয়াজে তৎপর হলেন । ছুটে এসে দুহাতে চেপে সহেলী কে ফের শুইয়ে দিলেন ধমক দিয়ে । রাত প্রায় সাড়ে দশটা । বাড়ির লোক সহেলী কে নিয়ে এলে ডাক্তার পুলিশ ডেকেছিলেন । পুলিশ বাড়ির সবার বয়ান নিয়েছে । তারা অপেক্ষা করছিলেন , সহেলীর হোশ আসবার প্রতীক্ষাতে । প্রায় আধ ঘন্টার অপারেশনে তার শিরা জোড়া হয়েছে । ডাক্তার বলেছিলেন কনডিশান দেখে , রক্ত দেবার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই জ্ঞান ফিরতে পারে । একটু দেরীতে হলেও ফিরে এসেছে ।
মেয়ের মুখে প্রসেনজিৎ-এর নাম শুনে বেজায় চমকালেন তিনি । তাঁর বন্ধুর ছেলের যে সহেলীর সাথে যোগাযোগ আছে ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেন নি সুদীপ বাবু ।
ঘটনার ঘনঘটায় দাঁত কিড়মিড়িয়ে থানার বড় বাবু স্বগতোক্তি করলেন ,
— যত নষ্টের গোড়া হচ্ছে ঐ সিনেমা হলের বক্স কেবিন গুলো । যতবার বন্ধ করি , নেতাদের ধরে চালু করে নেয় । তিনি হাঁক পাড়েন সাব- ইনেসপেক্টর কে ,
— যেমন করে পারন প্রসেনজিৎ কে ধরে আনা চাই গুঁই বাবু । যান ।
তিনি ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন বলে থানায় চললেন বয়ান ও এফ আই আর – এর কপি হাতে নিয়ে ।
সহেলী বোবা চোখে চায় বাবার দিকে । ক্ষমা চাইবে কি , দু চোখ দিয়ে তার অঝোরে জল বেরিয়ে আসছে । সেই আবছায়ায় হঠাৎ পিয়ালী হলের আবছা নীল বক্স কেবিন টা ভেসে উঠল কি ? সহেলীর মাথা ঝিমঝিমানি টা আবার ফিরে এসেছে । সে বুঝতে চেষ্টা করছিল , বাবা তার সামনে বসে কী ভেবে চলেছে ! অভিশপ্ত ঐ বক্স কেবিন টা কে কি ?
Be the first to comment