মৌলি বণিক-
সেদিন ছোট্ট একবিন্দু সবুজ আলোর অলঙ্ঘ্য হাতছানির শিকার ওরা – বহুদিন পর পরষ্পর পরষ্পরকে দেখে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত শিহরিত হয়ে উঠেছিল। একি স্বপ্ন, নাকি সত্যি – বুঝে উঠতে সময়ের হিসাব বে-হিসাব হয়ে গিয়েছিল। একটি শব্দও বিনিময় হয়নি, শুধু বোবা বিস্ময়ে ঋদ্ধি ও ঋতু দীর্ঘক্ষণ চেয়েছিল পরষ্পরের দিকে। ভিডিও কল অফ করার আগে স্খলিতকন্ঠে প্রায় অস্ফুটে ঋদ্ধি শুধু বলেছিল, ” তুমিই বহ্নিবন্যা? ”। আর ঋতু বলেছিল , ” সরি, আমি জানতাম না তুমিই – ‘অগ্নিঝরা খরা ‘ । ”
”বসন্ত বারোমাস” নামে একটি বহুল পরিচিত অনলাইন পর্নো সাইটে ওরা যখন নিজেদের ছবি লোড না করে , সতর্ক গোপনীয়তায় দুটি একাউন্ট খোলে, তখন বিধাতা আড়ালে বসে কৌতুকহাস্য করেছিলেন। কখন যে ‘ বহ্নিবন্যা ‘ ও ‘ অগ্নিঝরা খরা ‘ নিজেদের অজান্তে পরষ্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সে ইতিহাস আজ আর স্পষ্ট মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে, দু ইঞ্চি বাই দু ইঞ্চি বক্সের সীমিত পরিসরে আবদ্ধ উন্মত্ত উন্মাদনা ও উত্তেজনার মুহূর্তগুলোকে। মনে পড়ে একবিন্দু সবুজ আলোর হাতছানিতে সাড়া দিয়ে তুরীয় আনন্দে ভেসে যাওয়াকে স্বর্গসুখ বলে মনে হলেও, একদিন সেই স্বর্গসুখ চার বর্গইঞ্চির বাক্সে টেক্সট চ্যাটের শব্দ বন্ধনে নিজেকে আর বন্দী রাখতে অস্বীকার করল।
উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকল দুুরন্তগতিতে। বাস্তব প্রয়োজন ও চাহিদার পাল্লা ক্রমে ভারী হল। শুরু হল চরম পরিণতির পথে অতিদ্রূত ধাবমান প্রস্তুতি পর্ব – হোটেলের এডভান্স পেইড রুম বুুকিং থেকে শুরু করে পরষ্পরকে চাক্ষুস চেনার পর্ব।
আর সেই প্রস্তুতিরই অপরিহার্য অঙ্গ ছিল আজ রাতের এই ভিডিওকল। বিধাতার অত্যাশ্চর্য লীলাখেলা – সাবধানতার লক্ষণ-গন্ডী অতিক্রম করে, দীর্ঘ তিন মাসে এই ছিল প্রথম ওদের ভিডিওকল।
বৈদ্যুতিন ইথার তরঙ্গায়িত উপস্থিতি হয়তো বা কখনো কখনো বাস্তব উপস্থিতির থেকেও বেশী তীব্র আকর্ষণীয়, আরোও মদির, রহস্যময়। তাই বিগত তিনমাস ধরে প্রতি রাত্রে একটু একটু করে সযত্ন লালনে এই বাস্তবরহিত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। অথচ এই সম্পর্কই দীর্ঘ সাতবছরের বহু প্রয়াসের পরেও কোনদিন গড়েই উঠতে পারল না – ভাগ্যের পরিহাসে আইনি কাগজী স্বীকৃতিতে আজও ওরা দাম্পত্যবন্ধনে আবদ্ধ স্বামী-স্ত্রী; কোর্টের নির্দেশানুযায়ী এখনোও সেপারেশন পিরিয়ড অতিক্রম করতে পারেনি।
Be the first to comment