টানা দু’মাস বেস্ট সেলারের তকমা পেলো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লেখা দু’টি বই। “নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু” এবং “স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা”। ন্যাশনাল বুক এজেন্সি থেকে প্রকাশিত বই দু’টি পুজোর সময় মার্কসীয় সাহিত্যের স্টলে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বিক্রি হয়েছে নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু। কলেজস্ট্রিটের ন্যাশনাল বুক এজেন্সির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পাঠক যখন বই কিনতে আসছেন, তখন বেশিরভাগ সময়ই একই সঙ্গে দু’টি বই কিনছেন।
বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শারীরিক অবস্থা এমন যে বই পড়া বা লেখা কোনওটাই আর নিজে করতে পারেন না। রোজ খবরের কাগজ পড়ে শোনান একজন। কোনওরকম উচ্ছ্বাস বা উত্তেজনা তাঁর শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই তাঁর লেখা বইটি বেস্ট সেলার, প্রকাশকের কাছ থেকে এই খবরটি শুনেও কোনও পরিবর্তন হল না আচরণে।
নাৎসি জার্মানির উল্লেখযোগ্য উত্থান ও ভেঙে পড়ার ইতিহাস নিয়ে লেখা হয়েছে “নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু”। বুদ্ধদেববাবু বইটির স্বল্প ভূমিকায় লিখেছেন, নাৎসি জার্মানির উত্থান এবং বিপর্যয়ের ইতিহাস বিশেষ একটা আলোচিত হয়নি। ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার জন্য ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। পাশাপাশি তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি ইতিহাসবেত্তা নন। কোনও গবেষণা করা হয়নি বইটিতে নাৎসি জার্মানিদের নিয়ে। কিন্তু এতে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। একশো টাকা মূল্যের এই বইটিতে ষোলটি অধ্যায় রয়েছে। একদম প্রথমে রয়েছে প্রাক-কথন এবং তারপর সংযোজন পর্ব বাদ দিলে প্রকৃত তথ্যের চৌদ্দটি অধ্যায়। হিটলারের উত্থান পতন যেমন উল্লেখ করা হয়েছে বইটিতে, জার্মানি এবং ইতালির পতন, রাশিয়া নিজেকে বাঁচাবার জন্য যে লড়াই করেছিল তার বিস্তারিত বিবরণও রয়েছে।
আর “স্বর্গের নিচে মহা বিশৃঙ্খলা” বইটি লিখেছেন খুব অসুস্থ অবস্থায়। ৭২ পাতার এই বইটির দাম ৬০ টাকা। চিন কীভাবে মঙ্গোলীয় আক্রমণ ঠেকিয়েছে এবং অতিকায় যে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে তা কীভাবে সম্ভব ছিল। সমস্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই বইটিতে। প্রমোদ দাশগুপ্তর সঙ্গে চিনে যাওয়া এবং সেসময়কার স্মৃতি সাজিয়েছেন এই বইতে। পাশাপাশি চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব, যারা বিচার পেল না তাদের বিচার ব্যবস্থা আদৌ হল কি না, শেষে সে প্রশ্নও রেখে গেছেন তিনি।
শুধু এই দু’টো বই নয়। আরও নতুন নতুন বিষয়ে বই লেখার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। তবে, ইচ্ছে থাকলেও শরীর কতোটা সায় দেবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সুস্থ হয়ে উঠলে হয়তো আরও কোনও দুঃসময়ের ইতিহাস উপহার দেবেন পাঠকদের।
Be the first to comment