আগামী বছর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন।তাঁর আগে আজ, বুধবার আগামী অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এটাই মোদি সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ
বাজেট ।নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের মন জয়ে এ বারের বাজেটে কী কী আতশবাজি সাজিয়ে রাখবেন,সেদিকে তাকিয়ে আমজনতা।
মঙ্গলবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষায় সরকার এযাবৎ চালু প্রকল্পগুলির সাফল্য তুলে ধরেছে। মনে করা হচ্ছে ভোটের কথা মাথায় রেখে ফ্রি রেশন সহ জনকল্যাণ মূলক সব কর্মসূচিই চালু থাকবে। বুধবার সকালে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যখন লোকসভায় বাজেট পেশ করবেন, তখন তাঁর সামনে অর্থনীতির দুই প্রধান চ্যালেঞ্জ হল, আর্থিক বৃদ্ধি ও মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য রেখে দু’দিকই সামাল দেওয়া।
অতিমারির ধাক্কা সামলে ওঠার পর আন্তর্জাতিক অর্থনীতি টালমাটাল। ধেয়ে আসছে মূল্যবৃদ্ধির ঝোড়ো হাওয়া। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে বাজেটে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যথেষ্ট খরচ করতে হবে। যাতে কর্মসংস্থানও তৈরি হয়। কর্পোরেট কর এবং জিএসটি বাবদ আয় মন্দ হচ্ছে না।
কিন্তু কোভিডের সময় এক দিকে সরকারের আয় কমে যাওয়া, অন্য দিকে খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে রাজকোষ ঘাটতি বেড়ে গিয়েছিল। অর্থনীতির মূল্যায়নকারী সংস্থা বা রেটিং এজেন্সিগুলির ভারত সম্পর্কে মূল্যায়ন যাতে খারাপের দিকে না গড়ায়, তার জন্য রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরাতেই হবে। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট হলেও খুব বেশি খয়রাতি করা সম্ভব নয়।
অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে নির্মলা সীতারমনকে। এ বারও কোভিডের পরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বেধেছে।প্রতিবারই কোভিড পরিস্থিতি ফিরে আসার উপক্রম তৈরি হয়েছে। আইএমএফ-এর পূর্বাভাস— ২০২৩-এ বিশ্ব অর্থনীতির আর্থিক বৃদ্ধির হার ২০২২-এর ৩.২% থেকে ২.৭%-এ নেমে আসবে। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ, অর্ধেক ইউরোপ মন্দার কবলে পড়তে পারে। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়তে উন্নত দেশগুলি সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে।
সেই তুলনায় ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার চলতি অর্থ বছরে ৭% ছুঁতে পারে। যা দেখে মনে হতেই পারে, ভারত বেশ ভাল অবস্থায় রয়েছে। বাস্তবে কোভিডের সময় জিডিপি এতটাই কমে গিয়েছিল যে সেই তুলনায় আর্থিক বৃদ্ধি অনেকটা বেশি দেখাচ্ছে। আর সেই সুবিধা মিলবে না। আগামী অর্থবর্ষেই বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের ঘরে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। স্বস্তির কথা হল, কারখানার উৎপাদন, পরিষেবার কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে। ব্যাঙ্ক থেকে শিল্প বা ব্যবসার জন্য ঋণ বিলিও বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রকও মনে করছে, এ বার বেসরকারি লগ্নি আসবে। তাই অর্থমন্ত্রীকে সরকারি খরচের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার গোটা দায়িত্ব নিতে হবে না। আর্থিক বৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে চিনের পাশাপাশি ভারতেও কারখানা তৈরিতে আহ্বান জানাতে অর্থমন্ত্রীকে আরও উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহভাতা দিতে হবে। সেইসঙ্গে মোদি সরকার যে কর্মসংস্থানের সুযোগ করেছে, বাজেটে তার প্রমাণও দিতে হবে বইকি!
অর্থমন্ত্রীর সুবিধা হল, এ বছর তাঁর কর বাবদ আয় যথেষ্ট ভাল। আগামী বছরও একই রকম কর বাবদ আয় হবে বলে তিনি আশা করতে পারেন। খাদ্য ও সারে ভর্তুকিতেও খরচ কমানো যাবে। সুশাসনের পরিচয় দিতে একশো দিনের কাজ-এর মতো প্রকল্পে অর্থের অপচয়, বেনিয়ম বন্ধ করে তিনি অনেকখানি অর্থ সাশ্রয়ের আশা করতে পারেন। তবে চিন্তার কারণ হল, চলতি অর্থ বছরেই সরকারের রাজকোষ ঘাটতি ৬.৪ শতাংশ ছুঁচ্ছে। আগামী তিন বছরে ঘাটতি ৪.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পথ দেখাতে হবে বাজেটে।
আজ সকাল ১১টা থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করবেন নির্মলা সীতারমন।মোদির গদি ধরে রাখার পাশাপাশি জনগণের প্রত্যাশা তিনি কতটা পূরণ করেন, সেটাই এখন দেখার।
Be the first to comment