ঘরের বারান্দা আগুনে পুড়ছে। ভিতরেও ছড়াতে শুরু করেছে, কোনওরকমে জানালা দিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন জলি। যিনি তখন বাচ্চাদের জন্যই ডিনার তৈরি করছিলেন।ক্যালিফোর্নিয়ার জ্বলন্ত শহর প্যারাডাইসের শনিবার রাতের ছবি ঠিক এতটাই ভয়ানক। শুধু প্যারাডাইসই নয় , দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার চিকো, উত্তর স্যাক্রোমেন্টোর নাভাদার পাহাড়ি শহরগুলির অবস্থা আরও শোচনীয়। ধেয়ে আসা আগুন কেড়ে নিচ্ছে জীবন, নিখোঁজ হচ্ছেন বহু মানুষ। এখনও পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া মিলে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ অন্তত ৩৫।
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যতম উন্নত শহর চিকোর ছবিটা আঁতকে ওঠার মতো। শনিবার রাত, চিকোর হাসপাতালে পোড়া রোগীদের ভিড়। সামলাতে হিমশিম অবস্থা সার্জিকাল নার্স নিকোলো। যিনি জানেন না কী অবস্থায় রয়েছেন তাঁর স্বামী ও ২ সন্তান। ফোনে নেটওয়ার্ক নেই। হাসপাতাল থেকে বেরোতেই চোখের সামনেই নিকোলোর গাড়ি জ্বলে যায় । ফোনে তখনই স্বামীকে পেয়েছেন, জানাচ্ছেন নিজের অবস্থা। পুড়ে যাওয়া ঘর থেকে নিকোলোর স্বামীর চিৎকার-“মরতে যখন হবে লড়াই করেই মরব।” তারপর কী হয়েছে জানেন না নিকোলো। খোঁজ নেই তাঁর স্বামী, ২ সন্তানের। এভাবেই প্রত্যেক সেকেন্ডে ভয়াবহ হয়ে উঠছে ক্যালিফোর্নিয়া। নিরাপদ স্থানে যেতে পোড়া ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।
পুড়ে যাওয়া শহরগুলির হাসপাতাল খোলা রাখতেই হচ্ছে। প্রত্যেক হাসপাতালে ১০জন নার্স ও ২ চিকিৎসক থাকছে। হাসপাতালগুলি ঘিড়ে রেখেছেন দমকল কর্মীরা। হেলিকপ্টারে সমানে চলছে ওয়াটার স্প্রে। তবে ধেয়ে আসা আগুন সামলানো সহজ নয় বলেই জানিয়েছে দমকল।
গত ৩০ বছরে এই ধরণের ভয়ানক দাবানল দেখেনি ক্যালিফোর্নিয়া। উত্তর ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় যারা থাকেন তাঁরা আগুন, ধোঁয়া সামলে অভ্যস্ত। কিন্তু, ধেয়ে আসা আগুনে পুড়ে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। তাই প্রাণ বাঁচাতে ছবির মতো ঘরগুলিই ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ।গত কয়েকদিনে উত্তর ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া মিলে মোট ২০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।
দাবানল বিধ্বস্ত ক্যালিফোর্নিয়ার শহরগুলি এখন শুধুই একে অন্যের জন্য। কালো,সাদা,ডেমোক্রেটিক,রিপাবলি কান সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। খুঁজে বেরাচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়। প্রশাসনের তৎপরতায় ইতিমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়ার অধিকাংশ চার্চ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
Be the first to comment