কিছুদিন আগে পর্যন্ত দু’দেশের সম্পর্ক ছিল তলানিতে। ডোকলাম ইস্যু মিটেছে অনেকদিন। বর্তমানে প্রাসঙ্গিক অবশ্যই কাশ্মীর ইস্যু। কাশ্মীর ইস্যুতে চিন তুরুপের তাস খেলবে না তা ভাবাই যায় না। পাকিস্তানকে সাহায্য করতে রাষ্ট্রসংঘ পর্যন্ত গেছিল তারা। তবে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। কঠোর ভারতের দায়িত্বশীল জবাবে বিশ্বমঞ্চে কোণঠাসা হয়েছে দুই দেশ। তাতেও থামেনি চিন-পাকিস্তানের কূটনীতি। বুধবার চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। উঠে আসে কাশ্মীর প্রসঙ্গ।
আর বৈঠকের পরই বিবৃতি পেশ করে চিন। জানায়, কাশ্মীর ইস্যুতে তারা পাকিস্তানের পাশে আছে। ভারতকে একপ্রকার সমঝে চলারও বার্তা দেওয়া হয়। প্রত্যুত্তর দেয় বিদেশমন্ত্রকও। জানিয়ে দেওয়া হয়, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারও নাক গলানো মানা হবে না। উত্তর-পাল্টা উত্তরের মাঝেই আজ অন্য এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশ।
আজ বহু প্রতীক্ষিত সফরে ভারতে এলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। দুপুর ২টো নাগাদ চেন্নাইয়ে পা রাখেন তিনি। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বনওয়ারিলাল পুরোহিত। জানা গিয়েছে, চিনা প্রতিনিধিদল থাকবে চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে। এদিকে, মোদী ও তাঁর প্রতিনিধিরা হেলিকপ্টারে রওনা দেবেন মামাল্লাপুরমে। সেখানে একটি মন্দিরে পুজো দেবেন তাঁরা। শনিবার মামাল্লাপুরমেরই একটি সমুদ্র তীরবর্তী রিসর্টে দুই প্রধানের বৈঠক হবে।
মোদী হেলিকপ্টারে গেলেও চিনপিং অবশ্য ৫০ কিলোমিটার পথ কনভয়েই যাবেন। জানা গেছে, নিরাপত্তা সহ একাধিক ইস্যুর জন্য চিনপিংকে হেলিকপ্টারে পাঠাতে চাইছে না চিনা প্রতিনিধি দল। এদিকে, চিনপিংয়ের সফর ঘিরে কড়া নিরাপত্তা শহরজুড়ে। চেন্নাই থেকে মামাল্লাপুরমের রাস্তায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, মামাল্লাপুরমের রাস্তায় প্রতি ৫০ মিটারের মধ্যে CCTV বসানো হয়েছে।
জানা গেছে, তামিলনাড়ুর এই দ্বীপের সঙ্গে চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের বহুদিনের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আছে। দুই প্রধানের বৈঠকের মাঝে মোদী চিনপিংকে একথা জানাতেও পারেন। গতরাত থেকেই মামাল্লাপুরম রিসর্টে সবার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। এমনকী, ফোটোগ্রাফারদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদীর বৈঠক অবশ্য মানতে চাইছেন না তিব্বতিরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চেন্নাই পৌঁছানোর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে পাঁচ তিবেতিয়ান ছাত্র গুইন্ডির হোটেলের বাইরে (এখানেই থাকবেন চিনা প্রেসিডেন্ট) বিক্ষোভ দেখায়। তাদের আটক করেছে চেন্নাই পুলিশ।
এর আগে গতবছর এপ্রিলে চিনের উহান প্রদেশে দু’জনে বৈঠক করেছিলেন। তখনই, দেশে আসার জন্য চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে আমন্ত্রণ জানান মোদী। অবশেষে ফের একবার সাক্ষাৎ হতে চলেছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। সম্প্রতি কাশ্মীর নিয়ে দু’পক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাশে থাকার বার্তা দিয়ে চিনের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়, তারা জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে। প্রত্যুত্তরে বিদেশমন্ত্রক জানিয়ে দেয়, ভারত চায় না অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেউ নাক গলাক।
আজ অবশ্য মোদী-চিনপিং বৈঠক করবেন না। বৈঠক হবে শনিবার সকালে। সেখানে কী কী বিষয়ে উঠে আসতে পারে? সূত্রের খবর, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বক্তব্যে উঠে আসতে পারে সন্ত্রাসবাদ (কীভাবে সন্ত্রাসবাদ ঘটানো হচ্ছে, কীভাবে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হচ্ছে, কারা তাদের অর্থ সাহায্য করছে)। এছাড়াও, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহ একাধিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে দুই নেতার। সূত্রের খবর, ভারত-চিন সীমান্তে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তা নিয়েও দু’পক্ষের আলোচনা হতে পারে।
Be the first to comment