চিটফান্ড কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে বিজেপি নেতা মুকুল রায় এবং পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ফোনে কথোপকথনের অডিও টেপ ফাঁস হয়ে গেল।
কে বা কারা তা ফাঁস করেছে তা জানা যায়নি। অডিও টেপটি-র সত্যাসত্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি দ্য ওয়ালের পক্ষে। তবে ওই অডিও টেপটিতে যে তাঁরই গলা শোনা যাচ্ছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। সেই সঙ্গে অভিযোগ করেছেন, তাঁর ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ফের মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন মুকুলবাবু।
কিন্তু কী রয়েছে ওই অডিও টেপে?
কথোপকথনের শুরুতে মতুয়া সমাজে বিজেপি-র প্রভাব বিস্তারের কৌশল নিয়ে আলোচনা করছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুলবাবু। কিন্তু সে ব্যাপারে আলোচনা শেষ হওয়ার পর কৈলাস মুকুলবাবুকে বলেন, “আমি এখন অধ্যক্ষজি-র বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ) সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। কিছু বলতে হবে?” জবাবে মুকুল রায় বলেন, “চার আইপিএসের ব্যাপারে সিবিআইকে একটু নজর দিতে হবে। এ ব্যাপারে একটু নজর দিলে এই আইপিএস-রা ভয় পেয়ে যাবেন।” প্রসঙ্গত, সারদা কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার সহ চার জন আইপিএস অফিসারকে সম্প্রতি নোটিস দিয়েছে সিবিআই।
এখানেই থামেননি মুকুলবাবু। তিনি বলেন, “ওনাকে (অমিত শাহকে) বলুন, এখানে আয়কর বিভাগের একজন অতিরিক্ত ডিরেক্টর নিয়োগ করতে, ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)নয়। ডাইরেক্টর ইনভেস্টিগেশন অউর অ্যাডিশনাল ডাইরেক্টর ইনভেস্টিগেশন পোস্টের জন্য দু’জনের নাম আমার কাছে রয়েছে।” তা ছাড়া মুকুলবাবু এও বলেন, কৈলাসজির সিএ সঞ্জয়ের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ রেখে চলছেন। জবাবে কৈলাস তাঁকে জানান, কোন পোস্ট এবং সেখানে কাদের নিয়োগ করতে হবে তা যেন টেক্সট করে তাঁকে পাঠান মুকুলবাবু।
অডিও টেপটি-র সত্যাসত্য যাচাই করার আগেই এ দিন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তা হলে কি রাজনৈতিক ভাবে সিবিআইকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে?
এ ব্যাপারে মুকুলবাবুর কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। অডিও টেপটি না শুনেই প্রথমে সেটিকে সম্পূর্ণ সাজানো বলে মন্তব্য করেছিলেন এই প্রবীণ বিজেপি নেতা। পরে অবশ্য বলেন, না অডিও টেপটি জাল নয়। তাঁর ফোন ট্যাপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, সিবিআই এবং চার আইপিএস কর্তার ব্যাপারে তিনি যে কথা বলছিলেন, তার অর্থ কী? সিবিআইয়ের উপর তা হলে কি রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছে বিজেপি-র?
জবাবে মুকুলবাবু বলেন, “তা কেন? আমি দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্ত যাতে দ্রুত হয় সে ব্যাপারে বাংলার মানুষের দাবি রয়েছে। রাজ্য বিজেপি এ ব্যাপারে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করেছে। সেই ভাবাবেগের কথাই বলেছি। আমি কারও নাম মুখে আনেনি। সুতরাং এ ব্যাপারে কুন্ঠিত হওয়ারও প্রশ্ন নেই।” তবে এক নিঃশ্বাসে মুকুলবাবু এও বলেন, “এই অডিও টেপ ফাঁসের মধ্যে দিয়ে বার্তা একটাই। বাংলায় তৃণমূল সরকার পুলিশ দিয়ে বিরোধীদের ফোন ট্যাপ করে। দিল্লি হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলেছিল রাজ্য পুলিশ। বলেছিল, তারা আমার ফোন ট্যাপ করেনি। এই অডিও টেপ নিয়ে ফের মামলা করব পুলিশের বিরুদ্ধে।”
যদিও অডিও টেপটিতে গ্রাফিক্সের মাধ্যমে একটি অংশ জুড়ে দাবি করা হয়েছে, মুকুলবাবুর ব্যক্তিগত সহায়ক নাকি ওই কথোপকথন রেকর্ড করে নিয়েছিলেন। তিনিই টেপটি ফাঁস করেছেন। কিন্তু মুকুলবাবু সেই সম্ভাবনার কথা খারিজ করে দেন।
Be the first to comment