সদ্যপ্রসূতির মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতাল। মৃত তরুণী শর্মিষ্ঠা বসু ভট্টাচার্যের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতির কারণেই ঘটেছে মৃত্যু।
৩৪ বছরের শর্মিষ্ঠার মামা বিমল দে জানালেন, ২২ তারিখে হাজরার ওই হাসপাতালে ভর্তি হন শর্মিষ্ঠা। পরের দিন, ২৩ তারিখে তাঁর সিজ়ার করে সন্তান প্রসব হয়। কোনও রকম শারীরিক সমস্যা ছিল না মা ও শিশুর। চার-পাঁচ দিন পরে সেলাই কাটা হলে, সিজ়ারের ক্ষত থেকে রক্তপাত শুরু হয়। চিকিৎসকেরা জানান, আরও দু’টো স্টিচ দিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে।
বিমলবাবু জানান, সেই স্টিচই করা হয় গত কাল, ৩১ তারিখ। অ্যানাস্থেশিয়া করা হয়েছিল বলে, জ্ঞান ফিরতে বিকেল হয়ে যায়। খুবই দুর্বল ছিলেন শর্মিষ্ঠা। পরিবারের তরফে হাসপাতালে অনুমতি চাওয়া হয়, রাতে বাড়ির লোককে থাকতে দেওয়ার জন্য। অনুমতি মেলেনি। এর পরে এক জন আয়াকে ঠিক করা হয় বলে জানিয়েছেন বিমলবাবু।
পরিবারের দাবি, ভোর পাঁচটা নাগাদ শৌচালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় শর্মিষ্ঠার। কিন্তু অনেক বার ডেকেও নার্স বা আয়া কারও সাড়া মেলেনি। ওই ওয়ার্ডের অন্য প্রসূতিরাও জানিয়েছেন, শর্মিষ্ঠা অনেক ক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করেও কাউকে পাননি। বেডপ্যান বা অন্য কোনও রকম ব্যবস্থাও ছিল না। কিছু পরে তিনি নিজেই বেড থেকে নেমে ধরে ধরে শৌচালয়ে যান। অন্য রোগীরা জানিয়েছেন, শৌচালয় থেকে ফিরে খাটে উঠতে গিয়ে মেঝেতে পড়ে যান শর্মিষ্ঠা। কয়েক জন দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করলেও কারও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ।
বিমলবাবু জানিয়েছেন, অল্প কয়েক দিনেই ওয়ার্ডে সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন শর্মিষ্ঠা। ওঁর স্তন্যদুগ্ধের পরিমাণ অনেকটা বেশি ছিল বলে, নিজের সন্তান ছাড়াও অন্য যে সব মায়েদের বুকের দুধ কম ছিল, তাঁদের সন্তানদের খাওয়াতেন শর্মিষ্ঠা। নার্সরাই এমন ব্যবস্থা করেছিলেন।
বিমলবাবুর দাবি, শৌচালয় থেকে ফিরে ওই অবস্থাতেই প্রায় ঘণ্টা খানেক পড়ে ছিলেন শর্মিষ্ঠা। ভোর হওয়ার পরে নার্সরা এসে দেখেন এবং চিকিৎসককে খবর দেন। সঙ্গে সঙ্গে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হলেও, বাঁচানো যায়নি রোগিনীকে। বিমলবাবুর অভিযোগ, সদ্যপ্রসূতি অসুস্থ শর্মিষ্ঠা বারবার আয়া ও নার্সদের ডেকেও সাড়া পাননি। সেই কারণেই এই অবস্থা হয়েছে তাঁর।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পড়ে গিয়ে হার্টফেল করছেন শর্মিষ্ঠা। এর সঙ্গে গাফিলতির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু ভোর রাতে কোনও নার্স বা আয়া থাকবেন না কেন ওয়ার্ডে, এ প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, কমিটি গঠন করে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হবে।
একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন শর্মিষ্ঠার মা-বাবা কল্পনা ও সন্তোষ। তাঁরা চাইছেন, দোষীরা যেন শাস্তি পায়। অন্য কোনও সন্তানকে যেন এমন করে মা-কে হারাতে না হয়। সদ্যোজাত কন্যাশিশুটি এখনও হাসপাতালেই রয়েছে।
Be the first to comment