করোনা নিয়ে শুরু থেকেই সাবধানে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মধ্যেই তাঁর সরকারের এক আমলা-পুত্রের শরীরে করোনা করোনাভাইরাস মিলেছে। অথচ সেই যুবক হাসপাতালের পরামর্শ উপেক্ষা করে দু-দিন ঘুরে বেরিয়েছেন৷ এমনকি মায়ের কর্মস্থল নবান্নেও গিয়েছেন৷ এই ঘটনায় তিনি যে তিনি ক্ষুব্ধ, সেটা পরিস্কার বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বললেন, “পরিবারের এক জন প্রভাবশালী বলেই বিদেশ থেকে এসেও পার্কে, শপিং মলে ঘুরে বেড়ালেন— এটা আমি সমর্থন করি না।”
রবিবার লন্ডন থেকে ফেরেন ওই আমলার ছেলে। বিমানবন্দরে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু সংক্রমণ ধরা পড়েনি। এর পর সোমবার দুপুরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে যান ওই তরুণ। স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে কথা বলে তৎক্ষণাৎ তাঁকে আইডিতে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। সেই মতো আইডি-তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা হাজির ছিলেন। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তরুণের দেখা মেলেনি। অভিযোগ, ওই তরুণ তখন বাড়ি ফিরে চলে যান। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ওইসময় ছেলেকে আইডি-তে ভরতি করতে রাজি হয়নি ওই পরিবার৷ ১৭ তারিখ, মঙ্গলবার সকালে ওই তরুণ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আসেন। ভর্তি হন। তারপরই নমুনা পরীক্ষার পর দেখা যায় ওই তরুণ নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ওই তরুণই কলকাতায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী।
এরমধ্যেই সোমবার মায়ের সঙ্গে তাঁর কর্মস্থল রাইটার্সে যান ওই যুবক। সেখান থেকে নবান্নেও। সেখানে ষষ্ঠতলায় ৫১১ নম্বর ঘরে তিনি বসেন ওই মহিলা আমলা। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে নবান্নতেও। নবান্নের ষষ্ঠ তলায় ওই আমলার ঘর আজই সিল করে দেওয়া হয়েছে। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ভিজিটর্স ঢোকাও বন্ধ হল। এমনকি ওই দফতরের কর্মীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রাজ্যের তরফ থেকে এত সাবধানতা নেওয়ার পরও এভাবে তাঁর সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মীর পরিবারের এমন সচেতনার অভাব মেনে নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী৷ বুধবার বেশ ক্ষুব্ধই দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে৷
নবান্ন চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যাঁরা বিদেশ থেকে আসছেন, তাঁরা নিজেদের পরীক্ষা করান। প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি মেনে আইসোলেশনে থাকুন। অবিবেচকের মতো ঘুরে বেরানো ঠিক নয়। গতকালের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে৷” এরপরই তাঁর কড়া হুঁশিয়ারি, “প্রভাবশালী তাই পরীক্ষা করালাম না, চলবে না৷ ভিআইপি থেকে এলআইপি সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম।”
সংবাদ মাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ” এটা কলকাতার কেস নয়। ইউকে থেকে করোনা নিয়ে কলকাতায় এলেন এক জন। অথচ নিজেরা নিজেদের মতো করে লিখে দিলেন। আমাদের নিজেদেরও দেখা উচিত। বিনা কারণে আতঙ্ক ছড়ালে আমরা ব্যবস্থা নেব। যাঁরা করছেন, তাঁদের হাত জোড় করে অনুরোধ করছি, এটা করবেন না।”
Be the first to comment