‘ভোটের সময় ভোট চাইতে পাহাড়ে আসে, তারপর আর টাকা দেয় না’, নাম না করে পাহাড় থেকে বিজেপিকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক :- দার্জিলিঙে দাঁড়িয়ে ‘উন্নয়নের টাকা না দেওয়া’ নিয়ে আরও একবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দার্জিলিয়ের সরস মেলার মঞ্চে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তাকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন তিনি। তবে একবারও এই মঞ্চ থেকে সরাসরি বিজেপি সাংসদ বা বিজেপি দলের নাম মুখে আনেননি বাংলার প্রশাসনিক প্রধান। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “ওরা আমাদের টাকা দেয় না। ভোটের সময় ভোট নিয়ে চলে যায়। তারপর বলে ইয়ে করেঙ্গে, উও করেঙ্গে। হ্যান করেঙ্গে ত্যান করেঙ্গে…লেকিন কুছ নেহি করতে হে।”

মমতার কথায়, “আমরা লোকসভা নির্বাচনে লামা সাহেবকে প্রার্থী করেছিলাম। যিনি প্রাক্তন এডিএম ছিলেন। তাঁকে আমরা দাঁড় করিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি জিততে পারেননি। কী করে তিনি জিতবেন, তিনি তো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন না। এখন অনেক বেশি মিথ্যে জারিজুরি ও ফেক নিউজের জামানা। ন্যারেটিভ বেশি হয়ে গিয়েছে। যিনি জিতেছেন, তাঁর কাছে অনেক টাকা আছে। ভোটের সময় ওঁরা আসেন, টাকা বিলি করেন। কিন্তু আপনাদের হাসপাতালের জন্য তিনি কিছু করবেন না। আপনারা যখন খাবার পাচ্ছেন না, তখন তিনি কিছু করবেন না। যখন পানীয় জলের প্রয়োজন, তখন তাঁকে পাওয়া যাবে না।”
নাম না-করেও বিজেপিকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওঁরা নির্বাচনের জন্য একদিন কাজ করেন। কিন্তু আমরা ৩৬৫ দিন আপনাদের পাশে থাকি, আপনাদের জন্য কাজ করি।” এদিন জিটিএ প্রধানকে সমর্থন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি চাই দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে অনিত থাপার দল এগিয়ে যাক। পাঁচ বছর পরে কেউ কেউ পাহাড়ে আসেন। মানুষের জন্য কাজ না-করে তাঁরা গুলি চালিয়ে বোমা ফেলে পাহাড়কে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। এই অবস্থায় দোকান বন্ধ হয়ে যায়, হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। ট্যুরিস্ট আসে না।”
মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, পাহাড়ে অশান্তি তিনি চান না। তিনি চান পাহাড়ে শান্তি বজায় থাকুক। তিনি উন্নতি চান, পাহাড়ের ভালো চান। তাঁর কথায়, “যাঁরা অশান্তি চান তাঁদের সঙ্গে আমাদের তফাৎ এখানেই। আর এই তফাৎ থাকবেই। পাহাড়ে হিল ইউনিভার্সিটি ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে, প্রেসিডেন্সি সেকেন্ড ক্যাম্পাসও শুরু হতে চলেছে। ফলে এই উন্নতি আমি চাই।”
প্রসঙ্গত, এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, তিনি দার্জিলিঙের বর্তমান সাংসদ রাজু বিস্তাকে নিশানা করেছেন। একইভাবে এদিন তিনি সরাসরি পাহাড়ে বারবার বনধের নামে উত্তাপ তৈরি করার চেষ্টা করা বিমল গুরুঙকেও নাম না-করে বার্তা দিয়েছেন। একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে তাঁকে দেখা গেলেও সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছিলেন বিমল গুরুংরা। আর তাই এদিন তাঁদের নিয়েও পরোক্ষে সমালোচনার সুর শোনা গেল মমতার গলায়। এক্ষেত্রে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, পাহাড়ের অশান্তির পরিবেশে কোনওভাবেই সমর্থন করবেন না তিনি। বরং তাঁর সমর্থন সবসময় থাকবে উন্নয়ন এবং শান্তির দিকে।
পাশাপাশি রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ভূয়সী প্রশংসা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমাদের রাজ্যে এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ লাখ, অন্য কোনও রাজ্যে তা নেই। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য। জিটিএ এলাকায় ইতিমধ্যে ১১ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়ের কুটির শিল্প বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে হবে।’ অন্যদিকে এদিন সরস মেলার অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৫ সালে জানুয়ারি মাসে ফের উত্তরবঙ্গে আসবেন। কারণ, আর সেইসময় নেতাজি জন্ম জয়ন্তী পালন করা হবে। বলা বাহুল্য, এই প্রথম নয় প্রায় প্রতিবছরই মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি জন্ম জয়ন্তী পালনে পাহাড় সফরে যান।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*