
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা :- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস। এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা ও জনসমক্ষে রায়ের সমালোচনা করার অভিযোগ উঠল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। ‘আত্মদীপ’ নামক একটি অলাভজনক সংস্থার তরফে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্ত ওই নোটিস জারি করেছেন বলে সূত্রের খবর। এসএসসি মামলায় গত ৩ এপ্রিল ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। এরপর নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের নিয়ে বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের তুমুল সমালোচনা করেন মমতা। রায়ের পেছনে কোনও খেলা নেই তো? বলে প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি আরও বলেন, “অনেকে আমার বক্তব্য রেকর্ড করে বিচারপতির কাছে পাঠাতে পারেন। আমাকে জেলে ভরার জন্য। রায়ের নেপথ্যে অন্য কোনও খেলা নেই তো। কে খেলাটা খেলল, সুপ্রিম কোর্ট জানাতে পারেনি, কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য। আইনে বলা রয়েছে, ১০ হাজার অপরাধী সাজা পেয়ে যাক, কিন্তু এক জন নিরপরাধও যেন সাজা না পান।”
প্রধান বিচারপতিকেও নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের এর আগের বিচারপতি একটা অর্ডার দিয়েছিলেন। অন্য একজন বিচারপতি সেটা বদলে দিলেন কীভাবে?” চাকরিহারাদের বাঁচাতে প্ল্যান এ, বি, সি, ডি, ই রেডি আছে বলে উল্লেখ করেন মমতা। সুপ্রিম কোর্টের রায় মানবিক দিক থেকে তিনি মানতে পারছেন না বলেও জানিয়ে দেন মমতা। চাকরি বাতিল করে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেন মমতা। বড়সড় পরিকল্পনা চলছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশের শিক্ষকরাই উচ্চশিক্ষার কাণ্ডারী। তাদের অনেকে পরীক্ষার খাতা দেখছেন, তাদের অনেকে সোনার পদকপ্রাপ্ত। তাদের সকলকে চোর বলা হচ্ছে, সবাইকে অযোগ্য বলা হচ্ছে।
এবার, সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার নোটিসে অভিযোগ, শীর্ষ আদালতের বিচার আসনে বসে থাকা ব্যক্তিদের অপমান করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোটিসে আরও দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর সুপরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা। ‘আত্মদীপে’র তরফে ওই নোটিসে আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্তের দাবি, ৩ এপ্রিলের রায় মেনে চলতে হবে রাজ্যকে। রায় না মানতে জনতার উদ্দেশ্যে প্ররোচনামূলক মন্তব্য রাখা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের কাছে মমতাকে নিঃশর্ত ক্ষমাও চাইতে হবে বলেও দাবি তোলা হয়েছে ওই নোটিসে। নোটিসের দাবি না মানা হলে আইনত অ্যাকশন নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই আইনি চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের কাছে এসে পৌঁছেছে। যেহেতু আজ সরকারি ছুটি তাই, এখনও পর্যন্ত ওই আইনি চিঠির কোনো সদুত্তর দেওয়া হয় নি বলেই জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, এই চিঠি সম্পর্কে তৃণমূলের রাজ্য নেতা কুনাল ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বিচারব্যবস্থায় সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন। বিচারপতিদের সম্মান দেন। কিন্তু কোনো রায়ে ন্যায়বিচার না হলে বা বহু মানুষের ক্ষতি হলে, সেই অংশ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে পুনর্বিবেচনার কথা বলেন। এর সঙ্গে আদালত অবমাননার কোনো সম্পর্ক নেই।’। এরপরই তিনি প্রাক্তন হাইকোর্টের বিচারপতি তথা বর্তমানে বিজেপির সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম না করে উল্লেখ করে লেখেন, মনে রাখবেন, বিচারপতি চাকরি ছেড়ে বিজেপির সাংসদ হতে গেলেও সাধারণ মানুষের চোখে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পাশাপাশি তিনি বিরোধীদের কটাক্ষ করে লেখেন, রামবাম ভোটে পারে না, কোর্টে জট পাকায়।এছাড়াও কুনাল ঘোষ আরও লেখেন, এসএসসির রায়ের চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে চাকরি সুরক্ষার চেষ্টা করছেন, তাতে জটিলতা তৈরি করে প্রক্রিয়ার গতি কমানোর চক্রান্ত। চাকরিহারারা কী চান? মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টা সফল হোক, আপনাদের চাকরি বাঁচুক, নাকি এসব আইনি জট পাকানোর চক্রান্তকারীরা জটিলতা বাড়াক। অবস্থান নিন আপনারা।
Be the first to comment