বুধবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৯ সিপিআই(এম) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছরে পা রাখা উপলক্ষে সভা করে। ১৯৬৪ সালে সিপিআই ভেঙে সিপিআই(এম) তৈরি হয়। সেদিক থেকে দেখলে সিপিআই(এম)-এর বয়স ৫৫ বছর। কিন্তু অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ধারাবাহিকতা মেনে সিপিআই(এম) শতবর্ষ পালন করলো। একটা পার্টির ১০০ বছর বয়স হলো অথচ ৫০ অথবা ৭৫ বছরের তুলনায় সে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিগত লোকসভা ভোটে তার কঙ্কালসার চেহারা দেখা গেছে। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩টিতে জিতেছে।
আগামী ২১ অক্টোবর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার মোট ৩৭৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট হবে। সিপিআই(এম) ৩টি আসন পাবে কী না সন্দেহ। নাসিক থেকে মুম্বই পর্যন্ত লংমার্চ করেও মহারাষ্ট্রের গ্রামীণ এলাকায় কৃষকদের সমর্থন পাবে না। উন্নয়নের সব সূচকে খুবই পিছিয়ে থাকা হরিয়ানার ৯০টি আসনের একটিতেও জামানত রাখতে পারবে না। সামনেই ঝাড়খন্ড ও দিল্লি বিধানসভার ভোট হবে। সিপিআই(এম) একটি আসনেও জেতার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু এই হাল কেন? চিন বিপ্লবের নেতা মাও জে দং “Reform our Study” নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন দলের কর্মীরা গ্রিসের ইতিহাস পড়ছে অথচ দেশের মাটি ও মানুষকে চিনছে না। সিপিআই(এম)-এরও দশা তেমন হয়েছে। জারের রাশিয়া, চিয়াং কাই শেকের চিন অথবা কিউবার সঙ্গে ভারতের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির কিছুই যে মিল নেই এটা সিপিআই(এম) নেতারা বুঝতে পারছেন না।
বামফ্রন্ট সরকার চালানোর শুরুতে নেতারা মনে করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে দেবে না। তাই উন্নয়নের কাজ তেমন কিছু করার দরকার নেই। বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে তেমন কোনও উন্নয়নমূলক কর্মসূচী ছিল না। একটা দলের মাথায় যদি থাকে যে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বেশিদিন থাকতে দেবেনা তাহলে ভালো কাজ করার তাগিদটা আসে না। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার ৩৩ বছর ১১ মাস ক্ষমতায় থাকতে পারলো। সিপিআই(এম)-এর ধারনা ভুল হয়ে গেলো। কিন্তু কেন ভুল হলো তা আজ পর্যন্ত সিপিআই(এম) জানায়নি। এই দেশের বাস্তব পরিস্থিতি, মানুষের মেজাজ ও চাহিদা সিপিআই(এম) নেতারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
৫০ বছর আগে সিপিআই(এম)-এর একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। ১০০ বছরের মাথায় এসে দেশের অন্য যেকোনও দলের মতোই সিপিআই(এম)ও নিছক একটা গণতান্ত্রিক দলে পরিণত হয়েছে। এটা ঠিক এই দলের বেশীরভাগ সদস্য সাম্প্রদায়িক নন, দুর্নীতিগ্রস্তও নন। কিন্তু তা সত্ত্বেও অগ্রগতি আটকে গেছে কারন দেশের মানুষের চাহিদা এবং নাড়ির স্পন্দন সিপিআই(এম) নেতারা বুঝতে পারছেন না।
দেবাশিস ভট্টাচার্য
সম্পাদক
১৭.১০.২০১৯
Be the first to comment