
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- শনিবার হুগলির ডানকুনিতে সিপিআই(এম) ২৭তম রাজ্য সম্মেলন শুরু হয়েছে। চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। চারদিনের সম্মেলনের শনিবার প্রথম দিনেই মহম্মদ সেলিম, সূর্য্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীদের বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত। কেরলের ক্ষমতাসীন সিপিএমের প্রসঙ্গ টেনে বাংলার সিপিএম যে পিছিয়ে রয়েছে, তা উল্লেখ করলেন তিনি। দলে তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা অনেকটা পিছিয়ে, তা জানাতে ভোলেননি তিনি।
প্রকাশ কারাত বলেন,”পশ্চিমবঙ্গ সিপিএম তরুণ কর্মী বাড়াতে পারেনি। ছাত্র যুব আন্দোলনে আমরা যুবকদের একত্র করছি। কিন্তু, দলের সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পারিনি। সেদিক থেকে কেরল পার্টি অনেকটাই এগিয়ে। সেখানে মোট পার্টি সদস্যের ২২ শতাংশের বয়স ৩১ বছরের নীচে।” শুধু তাই নয়, বঙ্গ সিপিএমের একার কোনও শক্তি নেই, বলেও মন্তব্য কারাতের।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গে বামশক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে কারাত বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট ও বাম আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সবসময়েই সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখনকার পরিস্থিতিতে এরাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল দুয়ের বিরুদ্ধেই বামপন্থীদের লড়াই করতে হচ্ছে। কারণ এরাজ্যে ‘করাপ্ট–ক্রিমিনাল’ শাসন চলছে। বামপন্থী কর্মীরা হিংসাত্মক আক্রমণের মুখে পড়ছে। তার মধ্যেও বিগত তিন বছরে এরাজ্যে সিপিআই(এম) শ্রেণি ও গণসংগ্রাম সংগঠিত করতে অগ্রগতি ঘটিয়েছে। বিশেষত আরজি কর আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকার জন্য আপনাদের অভিনন্দন।”
ইন্ডিয়া জোটের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া জোট গঠনের মধ্য দিয়ে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করে বিজেপি’র সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন ঠেকানো গিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির বৃহত্তর ঐক্যের জন্যই জরুরি। কিন্তু সিপিআই(এম)’র স্বাধীন শক্তি বৃদ্ধি ও বামপন্থীদের শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। আরএসএস-এর সাম্প্রদায়িক মতাদর্শ এখন দেশের নানা প্রান্তে জনভিত্তি পেয়েছে। এই আদর্শের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সিপিআই(এম)’র স্বাধীন শক্তি ও বামপন্থীদের শক্তিশালী করা প্রয়োজন।”
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ঘটনার বিবরণ দিতে বিজেপিকে নিশানা করেন কারাত। তিনি বলেন,”ভারতে বিজেপি আরএসএস বাংলাদেশের ঘটনা ঘিরে যে প্রচার করছে তা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাঁচাতে নয়, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের আক্রমণ করতে। তৃতীয় দফায় সরকারে আসীন হয়ে মোদি সরকার ভারত রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ব কায়েম করার কাজে এতটুকুও খামতি নেই। নয়া উদারনীতি রূপায়নেও তারা যে তীব্রভাবে এগোতে চায়, তাও এবারের বাজেটে স্পষ্ট। ট্রাম্প যেভাবে ইলন মাস্ককে সরকারি ক্ষমতায় ভাগীদার করে তুলেছেন, সেভাবেই মোদিও তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের লুটের বন্দোবস্ত করে দিচ্ছেন। তাছাড়া স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে দখলদারি করছেন, বিরোধীদের জেলে পুরছেন, টাকার ব্যবহার ও মিডিয়া এবং নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচনেও জিতছেন। নয়া ফ্যাসিবাদীরা এভাবেই সংসদীয় ব্যবস্থাকে খাতায় কলমে জিইয়ে রেখেই ক্ষমতা দখল করে। ভারতে সেই নয়া ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে, এখনই সতর্ক হয়ে তাকে থামাতে হবে।”
আজ সম্মেলনে খসড়া রাজনৈতিক সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের দুর্বল করার জন্য তৃণমূল সাম্রাজ্যবাদীদের প্রকল্পের অংশ, লাল হঠাও বলে বামপন্থীদের দুর্বল করতে তাদের কাছে নানা জায়গা থেকে অর্থ এসেছিল। গণতন্ত্র রপ্তানির নামে বামপন্থীদের দুর্বল করতে এভাবে বিদেশী ফান্ডিংয়ের বিরোধিতা আমরা কমিউনিস্টরা বরাবর জোর গলায় করে এসেছি। বামপন্থীরা দুর্বল হলে ঢেঁকির উল্টোদিকে দক্ষিণপন্থীরা সবল হয়। এভাবেই ভারতের বুকে দক্ষিণপন্থার বিপদ পাখা মেলছে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের মতো এই বিপদকে ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা কায়েম হতে দিতে পারি না।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতিবাচক হস্তক্ষেপের জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি নেব। প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে বিশেষত গ্রামীণ গরিবের সঙ্গে জীবন্ত সংযোগ স্থাপন করে লড়াই তীব্র করে তুলব। মিথ্যা মামলা, হামলা, জেল ইত্যাদির মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী কর্মীরা লড়াই করছেন, এই সম্মেলনে আলোচনার পর আমরা আরও তীব্র আন্দোলনের কর্মসূচি নেব।”
এই রাজ্য সম্মেলনে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার, বৃন্দা কারাত, সূর্যকান্ত মিশ্র, তপন সেন, অশোক ধাওয়ালে, নীলোৎপল বসু, রামচন্দ্র ডোম প্রমুখ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত রয়েছেন।
Be the first to comment