জল-সংকট মেটাতে ৩৬ বছর পাহাড় খনন

Spread the love

তপন মল্লিক চৌধুরী –

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়- এ প্রবাদটি আমাদের সবারই  জানা। এর স্বপক্ষে দুনিয়াজুড়ে বহু ঘটনা রয়েছে। তবে সম্প্রতি চীনে এমন একটি বাস্তব ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যা বাকি সবগুলোর থেকে আলাদা। সে দেশটির এক নাগরিক কিংবদন্তি হয়েছেন দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে নালা বা ড্রেন খুঁড়ে। চীনা ওই নাগরিকের নাম হুয়াং দাফা। তিনি দেশটির গুইঝো প্রদেশের জুনাই নগরের কাওয়াংবা গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তার বয়স ৮২ বছর। এক সময় তার নিজের গ্রাম কাওয়াংবাসহ পার্শ্ববর্তী তিনটি গ্রামে পানীয় জলসহ ক্ষেতে সেঁচের জলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এই গ্রামগুলো ছিল তিনটি কার্স্ট বা পাথরের পাহাড় দ্বারা বিচ্ছিন্ন। জলের সংকট মেটাতে দাফা পরিকল্পনা নেন পাহাড় তিনটি কেটে একটি নালা বা ড্রেন তৈরি করার। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু কাজটি বিপজ্জনক এবং ড্রেনটি ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে জেনে সবাই পিছু হটে। তাকে সহায়তা করা তো দূরের কথা অনেকেই এই পরিকল্পনার জন্য তাকে ‘পাগল’ আখ্যায়িত করে। সবাই বলে এটি কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু হার মানেননি দাফা। এক সময় তিনি প্রতিজ্ঞা করেন একাই তৈরি করবেন এই ড্রেন। প্রয়োজনে সারা জীবন ব্যয় করবেন এর পেছনে। আর তার জীবদ্দশায় কাজ শেষ না হলে, উত্তরসূরিরা অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করবে। এই প্রতিজ্ঞা থেকে তিনি একাই শুরু করেন ড্রেন খননের কাজ। সেটি ছিল ১৯৫৯ সাল, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। দিন রাত খননের কাজ করেন আর গ্রামের বাসিন্দাদের বোঝাতে থাকেন দাফা। দীর্ঘ ২৬ বছর খননের পর যখন গ্রামের বাসিন্দারা দেখলেন আর মাত্র ১০০ মিটার খনন করলেই জল প্রবাহিত হবে, তখন কিছু মানুষ তার কথায় রাজি হন। তারাও যোগ দেন ড্রেন খননের কাজে। দাফার নেতৃত্বে কুঠার দিয়ে পাহাড় কেটে এই ১০০ মিটার ড্রেন তৈরি করতে তাদের লেগে যায় আরও ১০ বছর। এভাবে তিনটি পাথরের পাহাড় কেটে ৩৬ বছরে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেনটি তৈরি করেন দাফা। এ কাজ করতে গিয়ে দাফা হারিয়েছেন তার মেয়ে ও নাতিকে। খননের কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন তারা। কিন্তু দমে যাননি দাফা। প্রিয়জন হারিয়েও আজ যেন দুঃখ নেই তার। কেননা, তার স্বপ্ন এখন আর স্বপ্ন নেই। তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখন পাহাড় থেকে‌ পর্যাপ্ত জল  প্রবাহিত হচ্ছে ওই তিন গ্রামে। এলাকার ১২০০ বাসিন্দার বিশুদ্ধ পানীয় জলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সেখানে ব্যাপকভাবে বেড়েছে ধানের ফলন। আগে যেখানে বছরে মাত্র ২৫ হাজার কিলোগ্রাম চাল উৎপাদন হতো, বর্তমানে সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৪ লক্ষ কিলোগ্রামেরও বেশি। সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে হুয়াং দাফা এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম। তারা ওই ড্রেনের নাম দিয়েছেন ‘দাফা চ্যানেল’। শুধু তাই নয়, এখন সেখানকার বাসিন্দাদের মুখে মুখে প্রচলিত ‘ইউ গং ই শান’  অর্থাৎ বৃদ্ধও পারে পাহাড় সরাতে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*