আজ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস

Spread the love

আজ ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে । ভারতবর্ষের ধর্মীয় ইতিহাসে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে (১২৬২ বঙ্গাব্দের ১৮ জ্যৈষ্ঠ) এক ঐতিহাসিক দিন। এই বিশেষ দিনটিই ‘দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠাদিবস’।
১৮৪৭ সালে রানি রাসমণির একবার বাসনা হয় বিশ্বেশ্বর-অন্নপূর্ণা দর্শনের জন্য কাশী যাবার। কিন্তু যাত্রার আগের দিন রাত্রে তিনি স্বপ্নে দেবীর কাছ থেকে কাশী যাত্রার নিষেধাজ্ঞা পেয়ে গঙ্গা তীরেই দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্নভোগ দেবার নির্দেশ পান। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী রানি রাসমণি তাঁর কাশী যাত্রা স্থগিত রেখে গঙ্গার তীরে মা কালীর মন্দির নির্মাণ কার্যে অবতীর্ণ হন।
প্রথমে বারাণসী তুল্য গঙ্গার পশ্চিম তীরে মন্দির নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থানের সন্ধানে উত্তরপাড়া এবং বালি প্রভৃতি অঞ্চলে জমি সংগ্রহের চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই অঞ্চলের জমি না পাওয়াতে অগত্যা রানি রাসমণি গঙ্গার পূর্বতীর দক্ষিণেশ্বর গ্রামেই একটি বিশাল উদ্যানবাটি সহ জমি ক্রয় করেন। জমি ক্রয় থেকে শুরু করে মন্দির প্রতিষ্ঠার যাবতীয় কর্মে রানি রাসমণিকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছিলেন তাঁর তৃতীয় জামাতা মথুরামোহন বিশ্বাস। সকল কর্ম শেষ হবার পর রানি যখন উপযুক্ত দিনে মন্দির প্রতিষ্ঠা ও দেবীকে অন্নভোগ দিতে সচেষ্ট তখনই এল আর এক বাধা। রানি কৈবর্ত্য হওয়ায় সে সময়ের সমাজের প্রথা অনুযায়ী কোনও ব্রাহ্মণই এমনকি রানির নিজের গুরু বা পুরোহিতও এই মন্দির প্রতিষ্ঠা বা দেবীকে অন্নভোগ দিতে রাজি হলেন না। সে সময় বাধ্য হয়ে রানি রাসমণি বিভিন্ন চতুষ্পাঠীর পণ্ডিতদের কাছে এ বিষয়ে শাস্ত্র অনুযায়ী বিধান চাইলেন। তখন একমাত্র কলকাতার ঝামাপুকুর চতুষ্পাঠীর পণ্ডিত রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বিধান এল যে প্রতিষ্ঠার আগে যদি কোনও ব্রাহ্মণকে ওই মন্দির দান করা যায় এবং সেই ব্রাহ্মণ যদি ওই মন্দিরে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে অন্নভোগের ব্যবস্থা করেন তাহলে সে কাজ অশাস্ত্রীয় বলে গণ্য হবে না। এই উচ্চকোটি মাতৃসাধক রামকুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। সেসময় শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ তথা গদাধরও ঝামাপুকুরে তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সঙ্গে বাস করতেন।
রানি রাসমণি উদারমতালম্বী ব্রাহ্মণ পণ্ডিত রামকুমারকেই এই দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানালে বাইরের সমস্ত বাধা তুচ্ছজ্ঞান করে অন্তরের নির্দেশে রামকুমার এই কর্মে ব্রতী হয়ে কনিষ্ঠ ভ্রাতা শ্রীরামকৃষ্ণকে (সে সময়ের গদাধর) নিয়ে ঝামাপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বরে চলে এসে রানি রাসমণির ইচ্ছানুসারে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে (১২৬২ বঙ্গাব্দের ১৮ জ্যৈষ্ঠ), বৃহস্পতিবার স্নানযাত্রার পুণ্য দিনে মন্দির প্রতিষ্ঠার পুণ্য কাজ সমাধা করেন। প্রতিষ্ঠিত হল দক্ষিণেশ্বরের জগৎ বিখ্যাত কালীমন্দির যা ‘মা ভবতারিণী মন্দির’ রূপেই জগতে পরিচিত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*