অনুগল্প – দাম

Spread the love

দীপক আঢ্য –

প্রথম দিনই ছেলেটাকে দেখে বুকের ভিতর ছ্যাঁক করে উঠেছিল সরমাদেবীর। অবিকল সুজয়ের মতো। বয়স, গড়ন, গাঁয়ের রং সব। শুধু মুখের আদলটা একটু আলাদা। প্রত্যেকদিন ঠিক আটটায় আসে। ‘দুধ’ বলে অদ্ভুত ডাক দেয় ছেলেটা। সরমাদেবী জেনেছেন ও নিত্যানন্দ। মাইল পাঁচেক দূরে বাড়ি।

আজ প্রায় বছর সাতেক হতে চলল। শীত- গ্রীষ্ম- বর্ষা প্রতিদিন সকাল আটটা। সরমাদেবী নিজেও কত বার বলেছে, ‘তোমাকে দেখলে মনে হয় আমার ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে।’ নিত্যানন্দ হাসে। সরমাদেবী বলেন, ‘সে বিদেশে। সংসারী। এই বিধবা মাকে টাকা পাঠিয়ে কর্তব্য শেষ।’ নিত্যানন্দর কানে আসে সরমাদেবীর হতাশার শ্বাস।

সরমাদেবীর বাড়ির সামনে লোকে লোকারণ্য। নিত্যানন্দ শোনে, বিদেশে গাড়ি দুর্ঘটনায় সুজয় মারা গ্যেছে। শোকাস্তব্ধ হয় নিত্যানন্দও। সরমাদেবীর দেখা পায় না। অচেনা হাতে দুধের প্যাকেট তুলে দেয় নিত্যানন্দ।

দশ-বারো দিন পার হতেই বাড়ি শুনশান। সরমাদেবী আসেন। নিত্যানন্দর দিকে তাকিয়ে থাকে দুটো জল ভরা চোখ। ঠোঁট নড়ে। শব্দ হয়। ‘আর এসো না বাবা। দাম দেওয়ার মানুষটাই যে নেই।’

পরের দিন সকাল আটটা। অভ্যাস মতো নিত্যানন্দর সাইকেল থামে সরমাদেবীর বাড়ির গেটে। নিত্যানন্দ ‘দুধ’ বলে ডাকতে যায়। কিন্তু গলার স্বর বের হয় না। ধীরে ধীরে বারন্দার গেটের ভিতর দুধের প্যাকেটটা রেখে সাইকেল চাপে নিত্যানন্দ। চাকা দুটো ঘুরতে থাকে।

—শেষ—

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*