রোজদিন ডেস্ক:-
রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কামারহাটি সাগর দত্ত হাসপাতালে উত্তেজনা। চিকিৎসকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি রোগীর পরিবার-পরিজনদের। ঘটনায় আহত এক পুলিশ কর্মী-সহ দুই স্বাস্থ্যকর্মী। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে রোগীকে ফেলে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই রোগীর পরিবার-পরিজনেরা চড়াও হন চিকিৎসকদের উপর। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। ঘটনা সামাল দেওয়া চেষ্টা করেন হাসপাতালে থাকা পুলিশকর্মীরা। অখনই আহত হন এক পুলিশকর্মী এবং দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী। হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে কর্মবিরতির ডাক দিলেন সাগর দত্ত মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রঞ্জনা সাউ নামে বছর ৩৬-এর এক মহিলাতে শুক্রবার সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অভিযোগ, হাসপাতালে আনার পরেও রোগীর কোনও রকম চিকিৎসা হয়নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়েছিল। শেষে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় রঞ্জনার। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে যায় হাসপাতাল চত্বরে। রোগীর পরিজনদের সঙ্গে বাক্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন চিকিৎসকেরা। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। ঝামেলার মাঝে পড়ে আক্রান্ত হন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, রোগী মৃত্যুর পরেই তাঁর পরিজনেরা চিকিৎসকদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। চিকিৎসকদের ধাক্কাধাক্কি করা হয়। তাঁরা চিকিৎসকদের বাঁচাতে গেলে তাঁরা আহত হন। পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তেজনা সামাল দিতে গিয়ে তাদের এক কর্মীও উত্তেজিত জনতার হাতে আঘাত পেয়েছেন।
এদিকে, ৪ থেকে ৫ দিনের জ্বর ছিল তাঁর ৷ বেডের টিকিটে হাইরিস্ক কনসেন্ট সাইন করিয়ে নেওয়া হয় রোগীর আত্মীয়দের থেকে। রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় সিসিইউ-তে রেফার করা হয় রোগীকে ৷ সিপিআর-ও দেওয়া হয়। ওই সময় যিনি সিপিআর দিচ্ছিলেন তাঁকে পরিবারের তরফে বাধা দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ৩ মহিলা চিকিৎসককে শ্লীলতাহানি এবং তাঁদের লক্ষ্য করে বোতল ছোড়ারও অভিযোগ উঠেছে রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। হাসপাতালে সেইসময় সিকিউরিটি ছিল কম। পুলিশের সামনেই চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনা শোনামাত্রই ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ফ্রন্টের তরফ থেকে এক প্রতিনিধি দল যায় সাগর দত্ত হাসপাতালে। যাওয়ার আগে জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, “আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল আমাদের দাবি। আমরা এই দাবি তুলেছিলাম।”
উল্লেখ্য, সপ্তাহ খানেক আগেও রোগী মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল সাগর দত্তে। অভিযোগ, জরুরি বিভাগে মত্ত এক চিকিৎসক চিকিৎসা না করে ফেলে রেখেছিলেন রোগীকে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ ছিল, মত্ত অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন ওই চিকিৎসক। ইসিজি করিয়েছিলেন, কিন্তু রিপোর্টে কী ছিল তা জানানো হয়নি। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় কোনও চিকিৎসা না করেই ফেলে রেখেছিলেন তিনি। একপ্রকার বিনা চিকিৎসাতেই ওই রোগী মৃত্যু হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার সাগর দত্তে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল।
Be the first to comment