রাজ্যে ১০৮ পুরসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়াও সম্পূর্ণ হয়েছে। এই নির্বাচনী আবহে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনায় বিষয়ে হয়ে উঠেছে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও পরোক্ষভাবে সামনে চলে আসছে দলের অন্দরে বিভেদের আঁচ। গত কয়েকদিনে সংঘাতের যথেষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। আর এবার সেই বিতর্কে ঘৃতাহুতি দিলেন দলের তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা যুব সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু ভট্টাচার্য।
একদিকে যখন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ে উৎসবে মেতেছে, তখন দেবাংশু মনে করিয়ে দিলেন, ‘২০১৯ কিন্তু সময়ের অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে এক বিস্ফোরক পোস্ট করেছেন তিনি। এমনকি কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিও জানিয়েছেন তিনি, যা দল- বিরোধী মত বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের।
বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন দেবাংশু। আর তা ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রয়োজনে বিধানসভার দ্বিগুণ সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হোক।’ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি বারবার জানাচ্ছেন বিরোধীরা। এই দাবি নিয়ে হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। এরই মধ্যে দলের একজন অন্যতম মুখ হয়ে, দেবাংশু কী ভাবে সেই দাবি জানালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু তাই নয়, দেবাংশু বলেছেন, ‘আরেকবার “২০১৮” হলে আরেকটা “২০১৯” কিন্তু সময়ের অপেক্ষা.. বারবার সবটা “২০২১” এর মতো হবে না।’ তাঁর উল্লেখ করা এই সবকটি বছরের একটা বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ২০১৮-তে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছিল। বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বিরোধীরা। আর তারপরই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বড়সড় ধাক্কা খায় ঘাসফুল শিবির। বাংলায় চমক দিয়ে ১৮ টি আসন পায় বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের দাদাগিরিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আর এবার পুরভোটের ক্ষেত্রেও সেই ছায়া দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। সেই আবহেই ২০১৯-এর কথা মনে করিয়ে কোন ইঙ্গিত দিলেন দেবাংশু? কার্যত সাবধান করার সুরেই তিনি বলেছেন, ‘আর হাত জোড়া করে বাড়ি বাড়ি ঘুরলেও কিন্তু মানুষ ক্ষমা করবেন না।’ তাঁর দাবি, কিছু ‘স্বার্থান্বেষী বদমায়েশের জন্য’ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
এ ভাবেই ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে বিতর্কের সময়েও যখন দলের অন্দরে অভিষেকের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সমর্থন করেছিলেন দেবাংশু। অভিষেক-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই যুব নেতা দলের কোন অংশকে বার্তা দিতে চাইলেন, সেটাই চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।
Be the first to comment