দেবাঞ্জন খুনে গ্রেফতার বিশাল মারু নামে এক যুবক। পুলিশের বক্তব্য, খুনের দিন ঘটনাস্থলেই ছিল বিশাল। খুনের ঘটনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রয়েছে বলে মনে করছে তারা। দেবাঞ্জনের বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই বিশালের নাম উঠে আসে। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে নিমতা থানার পুলিশ। শনিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্রের খবর, ঘটনার পর প্রিন্স সিং একদিন এই বিশালের বাড়িতেই ছিল।
নবমীর দিন রাতে বান্ধবীকে বাড়ি ছাড়তে গিয়ে মৃত্যু হয় বছর ২০-এর দেবাঞ্জন দাসের। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি দুর্ঘটনা মনে হলেও পরে তাঁর বাবা অরুণ দাস গাড়িতে একটি বুলেটের ভাঙা অংশ দেখতে পাওয়ায় পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। বিষয়টি দুর্ঘটনা নয়, খুন। সেটা আরও প্রমাণ হয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পর। দেখা যায় দেবাঞ্জনের গলায় এবং বাঁ হাতে দু’টি গোল ক্ষত রয়েছে। তারপর তদন্তে উঠে আসে দেবাঞ্জনের বান্ধবীর নাম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর নানা তথ্য হাতে পান তদন্তকারী আধিকারিকরা। জানা যায়, সেই রাতে সোশাল মিডিয়ায় দেবাঞ্জনের সঙ্গে নিজের লোকেশন শেয়ার করেছিলো ওই বান্ধবী ৷ মেঘাকে জিজ্ঞাসা করেই জানা যায় বিশাল মারুর নাম।
বিশালের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর অপরাধ জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার। কিছু অপরাধীর সঙ্গে ওঠাবসাও ছিল। দেবাঞ্জন খুনের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। যদিও তার নামে সরাসরি এর আগে কোনও অপরাধের অভিযোগ নেই। তবে, এই ঘটনায় তার নামেও অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।
এছাড়াও পুলিশ জানতে পেরেছে, দুর্ঘটনার আগে নবমীর রাতে সল্টলেকের একটি পানশালায় পার্টি করতে গেছিলেন দেবাঞ্জন ও তাঁর প্রেমিকা। তাঁদের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধবও গেছিল সেই পার্টিতে। তাদের প্রত্যেকের বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ। পাশাপাশি পানশালাটির CCTV ফুটেজও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের অনুমান, গাড়ির চালকের সিটে ছিল দেবাঞ্জন, চলন্ত অবস্থাতেই তাঁকে গুলি করা হয়। সেকারণেই গুলি তাঁর বাঁ হাতে লাগে। এবং তারপরই স্টিয়ারিংয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়িটি ধাক্কা খায়। আততায়ীরা দেবাঞ্জনের পরিচিত ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। গতকাল ফরেনসিক পরীক্ষা হয় দেবাঞ্জনের গাড়ির ৷ কত দূর থেকে গুলি করা হয়েছে বা কী ভাবে ঘটেছে দুর্ঘটনাটি, গাড়ির গতিবেগই বা কত ছিল তাও পরীক্ষা করে দেখেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ৷ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানান, কিছু নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। সেইগুলি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। ফাইনাল রিপোর্ট এলে খুনের ঘটনাটি আরও স্পষ্ট হবে। পাওয়া গেছে গুলির নমুনা ৷ সংগ্রহ করা হচ্ছে রক্তের নমুনাও। যাতে বোঝা যাবে ওইদিন রাতে গাড়িতে কারোর সঙ্গে দেবাঞ্জনের ধস্তাধস্তি হয়েছিল কি না।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে যে গাড়ির মধ্যে দেবাঞ্জনের দেহ পাওয়া যায় সেই গাড়িটির ব্যালেস্টিক পরীক্ষা করা হবে। অন্যদিকে, ঘটনায় এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত প্রিন্স সিং। তার খোঁজে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তবে, এবার আর রাজ্যে নয়, পুলিশের অনুমান ভিন রাজ্যে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে এই যুবক। তাই ভিন রাজ্যেও তার খোঁজে প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন তদন্তকারী অফিসাররা। আজও দুর্ঘটনাস্থলে রয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিশালের গ্রেফতারিতে তদন্ত অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করছে পরিবার।
Be the first to comment