প্রাথমিকে ইংরেজি চালুর পক্ষে বলেছিলেন বামপন্থী মৃণাল জেঠু

Spread the love


মৃণাল জেঠুর বাড়িতে যখন যেতাম জেঠিমাকে বলতেন গীতা হনুমানের জন্য ভাত বাড়ো। অতো বড় পরিচালক কোনও অহমিকা নেই। বড় কাছের মানুষ ছিলেন।

মনে পড়ে, আমি আমি তখন ক্লাস এইট কি নাইনে পড়ি। একটা ছবিতে কৌশিক সেনের ডাবিং করার জায়গায় আমাকে ডাবিং করতে হয়। ওইসময় একটা ইন্টার স্কুল ডিবেট কম্পিটিশন হচ্ছিলো। বিষয়বস্তু ছিল প্রথমিক স্তরে ইংরেজি চালু রাখা উচিত না উচিত নয়? আমি বলেছিলাম উচিত। অদ্ভুতভাবে আদ্যোপান্ত বামপন্থী এই মানুষটা ইংলিশ চালু রাখার পক্ষেই সায় দিয়েছিলেন। যেভাবে ক্ষুরধার যুক্তির বুননে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন তা আজও ভুলিনি।

১৯৮২ সালে মোহিত চট্টোপাধ্যায় একটা ছবি করেছিলেন ‘মেঘের খেলা’। আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ উপলক্ষে তৈরি হয়েছিল সেই ছবি। সেই ছবির শুটিং দেখতে আসেন মৃণাল জেঠু। সেই প্রথম তাঁকে কাছ থেকে দেখা। এর পর মৃণাল জেঠু একটা ছবি করেন ‘চালচিত্র’। ওই ছবিতেই একটা দু’দিনের পার্ট দেন আমায়। ছবিতে ছিলেন, অঞ্জন দত্ত। আমার পেটে একটা খোঁচা দেবেন, আর আমি ‘আইক’ করে উঠব। আর আমি ঠিকমতো পারবো কী না তা দেখতে জেঠু আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছিলেন।

এর পর ‘খারিজ’ ছবিতে আমাকে ‘হরি’র চরিত্রে কাজ করার সুযোগ দেব মৃণাল জেঠু। যে চরিত্রটি প্রায় পুরো সিনেমা জুড়েই ছিলো। আমার মনে আছে প্রতিদিন সকালে কল টাইমে গাড়ি এসে আমাকে তুলত। তারপর মমতাশঙ্করকে তুলত। আমরা যেতাম। সেখানে প্রায় টানা ২০-২৫দিন একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। সেখানে প্রথম দেখেছিলাম, কোনও দিন প্রেশার দিয়ে অভিনয় করানো, সংলাপ বলানো নয়। স্বাভাবিক ভাবেই ছেড়ে দিতেন।

অন্যদিকে আমার বাবা দেবাশিস দাশগুপ্ত নাটকের গানের জন্য প্রখ্যাত ছিলেন। চলচ্চিত্রেও বহু দিকপালের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। মৃণাল সেনের সঙ্গে কাজ না করলেও আড্ডা জমতো বহুদিন।

জেঠুর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিলো বছর পাঁচেক আগে। তখন তিনি কিছু কিছু জিনিস ভুলে যেতেন। বয়সজনিত কারনে আলঝাইমার্স গোছের হয়েছে। তখন আমি তিনি আমাকে যে নামগুলিতে ডাকতেন সেগুলি বলতে থাকি। তাজু (আমার ডাক নাম), চাঁদু (চালচিত্রের চরিত্রের নাম) বা তাঁর প্রিয় হনুমান বলাতে চিনতে পারতেন। আজ জেঠু চলে গেলেন, শুধু চলচ্চিত্র জগতই নয় বর্তমান সমাজ হারালো এক অহংবিহীন মহান মানুষকে।

সবচেয়ে বড় কথা আমাকে হনুমান বলে ডাকার আর কেউ রইলো না।

‘চালচিত্র’ ছবিতে দেবপ্রতিম (তাজু)-

‘খারিজ’ ছবিতে দেবপ্রতিম-

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*