নানা রাজ্যের নানা খাবার (১ম পর্ব)

Spread the love

তপন মল্লিক চৌধুরী,

আমাদের দেশের প্রায় প্রত্যেকটি রাজ্যের ভাষা, পরিধান যেমন আলাদা আলাদা তেমনই খাদ্যোভাসও   আলাদা। এই বৈচিত্রময় দেশের ২৯ টি রাজ্যের ২৯ রকম স্পেশাল খাবার রয়েছে। যেমন দক্ষিণে জনপ্রিয় সাম্বার-ধোসা, তেমনি উত্তরে প্রসিদ্ধ তন্দরি চিকেন। এটা নতুন কিছু নয়। তবে ২৯টি রাজ্যেরও রয়েছে নানা চটপটা, জিভে জল আনা অজানা খাদ্য। এরমধ্যে অনেকগুলি স্পেশাল। সেগুলির মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটি খাবার তুলে ধরা হলো।

১. অন্ধ্রের পাপ্পু কোরা: অন্ধ্রপ্রদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও স্পেশাল ডিশ বলতে হায়দরাবাদের বিরিয়ানিই বুঝি। কিন্তু আরও একটি খাবার ওখানে খুবই প্রসিদ্ধ।যা অনেকেরই অজানা। অন্ধ্রে গেলে অবশ্যই বাড়ির তৈরি পাপ্পু কোরা খাবেন। এটি না খেলে আপনি সারা জীবন আফসোস করবেন। আসলে এটি পালং শাক আর হিং দিয়ে তৈরি সুস্বাদু ডাল। একবার চেখে দেখলে কখনও এই খাবারের নাম ভুলবেন না।

২. মিশা মাছ পোরা: উত্তর-পূর্বের অরুণাচল প্রদেশের খুব অপরিচিত খাবারে নাম বলতে গেলে এই ডিশের কথা উঠবেই। চিংড়ি মাছ ও নানা রকম সব্জি দিয়ে একটি সুন্দর রান্না। যদি কখনও অরুণাচল প্রদেশে ঘুরতে যান তাহলে অবশ্যই এই রান্নাটি খেতে পারেন।

৩.কোলডিল পারো মাংঘর জালুকা: কী খটমট নাম রে বাবা! এটাই মনে মনে ভাবছেন তো। কিন্তু এই খাবার একবার খেলে মুখে লেগে থাকবে সারা জীবন। আসলে রান্নাটি হয় পায়রার মাংস ও কলার ফুল (মোচা) দিয়ে। এর স্বাদ! অবিস্মরণীয়!!

৪. সুরান চাটনি: সুরান বা ওলের চাটনি আসলে নিরামিষ রান্নাগুলির মধ্যে অন্যতম। বিহারে বেশ পরিচিত এই চাটনি পরোটার সঙ্গে বেশ জমে।

৫. বিদিয়া: বিদিয়া হল গম ও চাল গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ছোট ছোট নিমকি। অনেকে বলের আকারেও তৈরি করে থাকেন। এতে কোনও মিষ্টি বা চিনি দেওয়া হয় না। তবে এই নিমকির মতো তৈরি জিনিসগুলো প্রথমে তেলে ভাজা হয়। তারপর চিনির সিরাপের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। নোনতা-মিষ্টি জাতীয় এই খাবারটি ছত্তিশগড়ে পাওয়া গেলেও, এ কথা খুব কম লোকই জানে।

৬. পাটোলিও: হুল্লোড়-মাস্তি আর অফুরন্ত ফূর্তির লাস্ট ডেস্টিনেশন বলতে গোয়া-কেই চিহ্নিত করা হয়। শুধু কি তাই, আরব সাগরের তীরে বসে, সোনালী বালিতে গা এলিয়ে নানারকম সি-ফুডের নেশায় মাতোয়ারা হওয়া যায় শুধুমাত্র গোয়াতেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষই এই সুস্বাদু রান্নাটি না খেয়েই চলে আসেন। সেটি হল পাটোলিও। মিষ্টি চাল দিয়ে তৈরি কেক। যা কিনা রান্না করার সময় হলুদের পাতায় মোড়া থাকে।

৭. মেথি মসলার সঙ্গে গুন্ডা স্টাফড: গুন্ডা হল একধরনের বেরি (Berry)। গুজরাতের স্বৌরাষ্ট্রে এই ধরনের বেরি পাওয়া যায়। ঐতিহ্যবাহী নিরামিষ রান্নাগুলির মধ্যে এই বেরি উইথ মেথি মশালা অন্যতম। এই রান্নায় কাঁচা আম, শুকনো লঙ্কা ব্যবহার করা হয়। টক-ঝাল-মিষ্টির অপরূপ সম্ভার এই রান্নাটি শুধুমাত্র গুজরাতেই প্রসিদ্ধ। তাই সেখানে গেলে নিশ্চয়ই খাবেন।

৮.বাজরে কি খিচড়ি: বর্ষার বৃষ্টি মাটি ছুঁতে না ছুঁতেই বাড়ির হেঁসেলে চেপে যায় চাল-ডাল সংমিশ্রনে তৈরি খিচুড়ি। তার সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা, কিংবা পাপড় বা বেঙুন ভাজা! উফফ…ভাবাই যায় না। তবে পরিচিত খিডুড়ির জায়গাই এই রান্নাটি একবার ট্রাই করতে পারেন। শুধু চালের বদলে বাজরা। তবে এর জন্য যে একবার যেতে হবে হরিয়ানায়।

৯. পাটান্ডে: এককথায় ভারতীয় প্যান কেক। হিমাচল প্রদেশের সিরমুর জেলার জনপ্রিয় এই রান্নাটি ময়দা ও চিলি ফ্ল্যাকস দিয়ে তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে আলুর দম হলে তো আর কথাই থাকে না। তাহলে হিমাচল প্রদেশে গেলে একবার অন্তত চেষ্টা করতে পারেন।

১০. গুসটাবা: যারা কাশ্মীরে গিয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই কাহওয়া, রোগান জোশ, ইয়াখনি, দম আলু-এই রান্নাগুলি খেয়ে থাকবেন। কিন্তু মিস করেছেন একটা স্পেশাল রান্না। স্থানীয়রা আমেরিকান বল বলে থাকেন, কিন্তু আসল নাম হল গুসটাবা। ভেড়ার মাংস বা চর্বি দিয়ে তৈরি হয় এই রান্নাটি। ছোট ছোট বলের আকারে তৈরি করে দইয়ের গ্রেভির সঙ্গে মেশানো হয়। অসাধারণ গুসটাবা মুখে দিলেই মনে হবে আপনি কোনও ঈশ্বরপ্রদত্ত এলাকায় বিরাজ করছেন!

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*