নোট বন্দির সিদ্ধান্তের জেরে চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে এই প্রথম মেনে নিল কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংসদে সরকার জানাল, মৃত ওই চার জনের মধ্যে তিন জন ব্যাঙ্ক কর্মী, এক জন গ্রাহক।রাজ্যসভায় একটি লিখিত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ দিন বলেন, “স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, নোটবন্দির সময় তাদের তিন জন কর্মী মারা গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছিল এক জন গ্রাহকের।”
রাজ্যসভায় এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করেছিলেন কেরল সিপিএমের সাংসদ এলামারাম করিম। তাঁর প্রশ্ন ছিল, নোটবন্দির সময়ে টাকা বদলাতে গিয়ে মানসিক অবসাদ, চাপ, আতঙ্কে কত জনের মৃত্যু হয়েছে সরকার কি জানে? ক’জন ব্যাঙ্ক কর্মীই বা মারা গিয়েছেন? সরকার তা জানলে যেন সংসদকে জানায়। জেটলি জানিয়েছেন, স্টেট ব্যাঙ্ক ছাড়া আর কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এমন দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতার কথা জানায়নি। স্টেট ব্যাঙ্কের তিন কর্মী ও মৃত গ্রাহকের পরিবারকে মোট ৪৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
যদিও জেটলির তথ্য মেনে নিতে চাননি বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, নোটবন্দির সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৃত্যুর খবর এসেছিল। কোথাও এটিএমের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে, কোথাও বা ব্যাঙ্কের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক জন গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে। সরকার প্রকৃত তথ্য গোপন করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতকালই আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের মুখ্য অর্থনীতিক গীতা গোপীনাথ জানিয়েছেন, অবিবেচকের মতো নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদী সরকার। তার ফলে গড় জাতীয় উৎপাদন ২ শতাংশ কমে গিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জেটলি এ দিন স্বীকার করে নেন, শিল্পক্ষেত্রে বা কর্মসংস্থানের উপর নোটবন্দির কী প্রভাব পড়েছে তা নিয়ে সরকার এখনও বিশদে কোনও সমীক্ষা চালায়নি।
এ ঘটনাকেও অবিবেচকের মতো কাজ বলেই এ দিন সমালোচনা করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল সহ বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে যে নোটবন্দি করল তার প্রভাব খতিয়ে দেখারও প্রয়োজন বোধ করল না। সবটাই কি তা হলে গিমিক। অর্থনীতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই!
তা ছাড়া কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যেই পরিষ্কার যে নোটবন্দির ফলে সরকারের লাভের থেকে লোকসান হয়েছে বেশি। নোটবন্দির আগের আর্থিক বছরে নোট ছাপাতে সরকারের খরচ হয়েছিল, ৩৪২১ কোটি টাকা। কিন্তু সে বছর ও পরের আর্থিক বছরে নতুন নোট ছাপতে সরকারের খরচ হয় যথাক্রমে ৭৯৬৫ কোটি এবং ৪৯১২ কোটি টাকা।
তৃণমূলের এক মুখপাত্রের কথায়, নোটবন্দির সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, নোটবন্দির আড়ালে বড় রকমের আর্থিক দুর্নীতি করল সরকার। এর ফলে বিপর্যয় হবে অর্থনীতির। সে কথা এখন প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। উনিশে এর জবাব সুদে আসলে পাবেন মোদী-জেটলিরা।
Be the first to comment