নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা। বাংলাদেশের হাইকোর্ট পর্যন্ত মন্তব্য করেছে, ঘটনাটি হৃদয় বিদারক। বহু টানা পড়েনের পরে ওই স্কুলের অধ্যক্ষা-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা শুরু করেছে পুলিশ।
ঠিক কী হয়েছিল? ঢাকা পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকার বেইলি রোডে অবস্থিত ভিকারুনসিরা নুন স্কুলে পড়ত বছর পনেরোর অরিত্রী অধিকারী। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় ওই কিশোরী। তাই সোমবার তার বাবা-মাকে স্কুলে ডেকে পাঠান সহ-অধ্যক্ষ।
অরিত্রীর বাবা-মায়ের দাবি, ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে মেয়ের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন তাঁরা। তাকে টিসি না দেওয়ার অনুরোধ করেন। অরিত্রী নিজেও স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালের পা ধরে কান্নাকাটি করে। কিন্তু তাতেও মন গলেনি সহ-অধ্যক্ষের। উল্টে ওই ছাত্রী ও তার বাবা-মাকে স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন তিনি। চোখের সামনে বাবা-মায়ের অপমান সহ্য করতে পারেনি ওই কিশোরী। বাড়ি ফিরে আত্মহত্যা করে সে।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ঢাকা। মঙ্গলবার সুবিচারের দাবিতে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখায় আত্মঘাতী স্কুলছাত্রীর সহপাঠীরা। এই বিক্ষোভের জেরে ভিকারুনসিরা নুন স্কুলে যান বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। স্কুলের পড়ুয়া ও অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়? কেউ অপরাধী হলে অবশ্যই শাস্তি পাবে।”
এর পরেই পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি গ্রহণ করে ওই স্কুলের ছাত্রীরা। একই সঙ্গে বুধবার সকাল থেকে স্কুলের গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করা হবে বলে জানিয়েছে ছাত্রীরা। অভিযুক্তদের বরখাস্ত করা এবং অরিত্রী মৃত্যুর বিচারের দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। যোগ দেবেন অভিভাবকেরাও।
এই বিক্ষোভের পরেই নড়েচড়ে বসে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই স্কুলের প্রধান জিন্নাত আখতারকে শো-কজ় করেছে পরিচালনা কমিটি। অরিত্রীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যক্ষা-সহ কয়েক জন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলার রুজু করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে নিন্দায়। স্কুলের এমন অমানবিক আচরণ মেনে নিতে পারছেন না কেউ। ছাত্রীটি যদি অপরাধ করেই থাকে, তবে তার উপযুক্ত শাস্তি হতে পারত। অপমান করা একেবারেই ঠিক হয়নি বলেই মত রেখেছেন নেটিজেনদের একটা বড় অংশ।
Be the first to comment