বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আচার্য তথা রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করার পথে রাজ্য সরকার। এ জন্য নতুন নিয়ম বিধানসভায় পেশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট বা কোনও বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে এতদিন নিয়ম ছিল উপাচার্যের তরফে আচার্য তথা রাজ্যপালকে বৈঠকের দিন জানানো হবে। এবং তারপর রাজ্যপাল বৈঠক ডাকবেন। কিন্তু নতুন নিয়মে রাজ্যপালের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। এখন থেকে বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে উপাচার্য শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সেই বৈঠক ডাকতে পারবে। রাজভবনকে শুধুমাত্র দিনক্ষণ উপাচার্যের তরফে জানিয়ে রাখলেই হবে। এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক উপাধি দেওয়ার ক্ষেত্রে যে তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করত সেই তালিকা রাজ্যপালের কাছে পাঠাতে হত। তারপর প্রয়োজনে রাজ্যপাল সেই তালিকায় বদল আনতে পারতেন। কিন্তু নয়া নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা পাঠাবে শিক্ষা দফতরকে। শিক্ষা দফতর সেই তালিকা পাঠাবে রাজভবনকে। সেই তালিকায় কোনও অদল বদলের ক্ষমতা রাজ্যপালের থাকবে না।
রাজ্যপালের সঙ্গে এখন থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সরাসরি যোগাযোগ থাকবে না। কার্যত নিয়ম বিধিতে সেই বদলি নিয়ে এল সরকার। সবক্ষেত্রেই শিক্ষা দফতর মারফত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজভবনের যোগাযোগ হবে নয়া নিয়মে। আগে নিয়ম ছিল কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি মারফত তিনজনের নামের তালিকা শিক্ষা দফতর রাজ্যপালকে পাঠাবে। সেই তিনজনের মধ্যে থেকে কোনও একজনকে রাজ্যপাল উপাচার্য হিসেবে বেছে নেবেন। কিন্তু নয়া নিয়মে বলে দেওয়া হচ্ছে, এখন থেকে তিনজনের মধ্যে যে কোনও একজন নয়, প্রথমে যার নাম থাকবে সেই নামেই অনুমোদন দিতে হবে রাজ্যপালকে।
বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে রাজ্যপালের একজন প্রতিনিধি থাকত। সেই নাম রাজ্যপাল নিজেই নির্ধারণ করতেন। তবে নতুন নিয়মে, এখন থেকে শিক্ষা দফতর রাজ্যপালকে তিনটে নাম পাঠাবে। সেই নামের মধ্যে থেকেই যে কোনও একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে রাজভবনের প্রতিনিধির জন্য মনোনীত করতে হবে রাজ্যপালকে। যদি কোনও উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে রাজ্যপালের কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে এখন থেকে রাজ্যপাল সরাসরি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরকে জানাতে হবে রাজভবনের এবং তারপর শিক্ষা দফতর তদন্ত করে দেখবে। সেই তদন্তের ভিত্তিতে হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
সমাবর্তনের ক্ষেত্রেও উপাচার্য যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে নিতে হবে। সরাসরি সমাবর্তন এর ক্ষেত্রে আচার্য রাজ্যপাল উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। আচার্য বা রাজ্যপালের বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যদি কোনও প্রস্তাব থাকে, তাহলে তা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে জানানো যাবে না। এতদিন আচার্য বা রাজ্যপাল সেটা সরাসরি উপাচার্যকে জানাতে পারতেন। এখন থেকে যে কোনও প্রস্তাব শিক্ষা দফতর মারফত রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আচার্যের কোনও সচিবালয় থাকবে না। এতদিন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও বিধির ক্ষেত্রেই প্রয়োজনমতো বদলের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের থাকবে।
Be the first to comment