এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়নি, বরং এটি একটি সংঘর্ষের ঘটনা। অ্যাপল সংস্থার আধিকারিকের মৃত্যুর পর শনিবার এমনই সাফাই গেয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। প্রয়োজনে সিবিআই তদন্তের আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। উল্টো সুর গাইলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী ধর্মপাল সিংহ। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ফের একবার অস্বস্তিতে যোগী সরকার।
গোটা ঘটনায় নিহত নিহত অ্যাপল কর্মী বিবেক তিওয়ারিকেই কাঠগড়ায় তুলে মন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ এনকাউন্টার করে কোনও ভুল করেনি। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, মন্ত্রী ধর্মপাল সিংহ বলেছেন, “বুলেট শুধুমাত্র অপরাধীদেরই নিশানা করে। সমাজবাদী পার্টির ‘গুন্ডারাজ’ যে দিন দিন বাড়ছে সেটা দিনের আলোর মতোই পরিস্কার। বাকি সব ঠিক আছে, কিন্তু যখন অপরাধ মাথা চাড়া দেবে আমরা চুপ করে থাকব না।” মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই সরকার এবং প্রশাসনের মতভেদ সামনে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন এটি পুলিশি সংঘর্ষের ঘটনা নয়, কিন্তু মন্ত্রী বললেন এ ক্ষেত্রে এনকাউন্টারই করা হয়েছে।
রুটিন তল্লাশির সময়ে গাড়ি না-থামানোয় অ্যাপল সংস্থার ‘এরিয়া ম্যানেজার’ পদে থাকা বছর আটত্রিশের বিবেক তিওয়ারিকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ ওঠে দুই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে। শনিবার গভীর রাতে এক মহিলা সহকর্মীকে নিয়ে বাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন বিবেক। গোমতীনগর এক্সটেনশন এলাকায় সেই সময় রুটিন তল্লাশির দায়িত্বে ছিলেন কনস্টেবল প্রশান্ত চৌধুরি ও তাঁর এক সহকর্মী। বিবেকের খুনে অভিযুক্ত কনস্টেবল প্রশান্তের দাবি করেন, তিনি মোটবাইকটিকে থামতে বললেও সেটি চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় গাড়ি নিয়ে তাঁরা বাইকটিকে থামানোর চেষ্টা করেন, বাইকে ধাক্কা লাগে গাড়ির। প্রশান্তর কথায়, তিনি গাড়ি থেকে পড়ে গেলে বিবেক তাঁর উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আত্মরক্ষার জন্যই তিনি তখন গুলি চালান। গুলি লাগে বিবেকের ঘাড়ে।
এই ঘটনার পরই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা জানিয়ে দেন, এটা পুরোপুরি পুলিশ ম্যানুয়াল না মেনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা।উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি ও পি সিংহ বলেন, “এটি একটি খুনের ঘটনা। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। আমরা এই ঘটনা কোনভাবেই সহ্য করব না, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সিবিআই তদন্ত, এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও পুলিশে চাকরি চেয়ে যোগীকে চিঠি লিখেন বিবেকের স্ত্রী কল্পনা। এনকাউন্টারের অভিযোগ ঝেড়ে ফেলে যোগী মন্তব্য করেন, ‘‘এটা পুলিশি সংঘর্ষের ঘটনা নয়। প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত হবে।’’
এত কিছুর পরেও রাজ্যের এক মন্ত্রীর মুখে এনকাউন্টের কথা শুনে ধোঁয়াশা আরও বেড়েছে। বিরোধীদের দাবি, বিবেক তিওয়ারি খুনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী একরকম বলছেন, পুলিশ কর্তা অন্যরকম বলছেন আবার রাজ্যের মন্ত্রীর মন্তব্য আরএক। তাহলে আসল সত্যিটা কী?
Be the first to comment