মাসানুর রহমান,
ক্রমশ চলতে থাকা পথে ফিকে হয়ে পড়া বসন্ত কোথাও কি অবচেতন মনে হারিয়ে ফেলছে আত্মজ? নাকি নিতান্তই উদার মননশীলতা? তবে কি বাঙালী ভুলতে বসেছে তার নিজস্ব সংস্কৃতি? কালক্রমে সারা বাংলায় বাঙালি যেন মেতে উঠেছে এক অবাঙালী সংস্কৃতিতে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই দেখি মোবাইলে একগাদা শুভেচ্ছাবার্তা জমেছে। মুঠোফোন হাতড়ে ফেসবুক, ওয়াটসপে চোখ রাখতেই রাশি রাশি দোলের শুভেচ্ছা তবে একটু অন্যভাবে “হ্যাপি হোলি”।
খানিকটা নয় অনেকটাই বিস্মিত হয়েছিলাম। বাঙালী কত সহজে আস্তে আস্তে ধাতস্থ করে নিচ্ছে অবাঙালী সংস্কৃতিকে। কত সহজে আপন করে নিচ্ছে পারিপার্শ্বিক আচার-আচরণকে। এই সমস্ত কিছুকে নিয়ে যখন বেলা গড়ালো তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশাল ভাবে প্রশ্নচিহ্ন এই দোল আর হোলিকে নিয়ে। তখন ভাবলাম যাক কেবল আমি একা নই আরোও বহু মানুষ আছে যারা এই ‘নিজেকে’ নিয়ে ভাবছেন।
এ বিষয়ে রোজদিনের সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকারে আজ ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও উলুবেড়িয়া কলেজের বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট অধ্যাপক শুভময় ঘোষ। তাঁর মতে, বাঙালী বরাবরই নিজেরটার থেকে অপরেরটাকে বেশি ভালো চোখে দেখে, বরাবরই অপরের জিনিসটাকে বেশি আপন করে নেয়। অবশ্যই আস্তে আস্তে বাঙালী হারিয়ে ফেলছে তাঁর নিজস্ব সংস্কৃতিকে। তবে এটার একটা ভালো দিকও আছে বাঙালীর এই অবাঙালী সংস্কৃতিকে আপন করে নেওয়ার ফলে তারা যে উদার মনমানসিকতার তা স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে৷
তিনি বলেন, তবে বিগত সময়কালেও বহু বাঙালী দোলকে হোলিই বলেছে তবে এখন এই ভার্চুয়াল জগতে এসে হয়তো তার প্রভাব আরোও স্পষ্ট হয়েছে৷ বহু বাঙালী হয়তো ভুলেই গেছে আজকের দিনটার সাথে শ্রী চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের এক বিশেষ সূত্র জড়িয়ে থাকা, হয়তো ভুলেই গেছে বকুলমালা, লাল- নীল- হলুদ আবির শান্তি- সম্প্রীতি -সৌভ্রাতৃত্ববোধের অনন্য রূপ এনে দেয়। মা মা গন্ধে মুখরিত হয় উৎসবের দিনটি।
তাঁর মতে, হয়তো আমরা সবাই পারিপার্শ্বক স্বাদে নিজেদের বড্ড বেশি মত্ত করে তুলেছি তবে মাটির সুখ- আপন সংস্কৃতিই আমাদের সর্বশক্তি, আমাদের প্রবল আনন্দ। জানিনা কবে আবার বাঙালী আপনমনে নিজেকে আরোও বেশি বেশি করে ভালোবাসবে, নিজেকে আরোও বেশি বেশি করে ছড়িয়ে দেবে, নিজেকে আরোও নিজের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করবে। তবে এযাবৎ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে পয়লা বৈশাখ থেকে নবান্ন, দিপাবলী থেকে দোল বাঙালীর বুক পকেট থেকে যেভাবে হারিয়েই যাচ্ছে নিজস্বতা তা নিঃসন্দেহে কপালে ভাঁজ ফেলার মতো।
Be the first to comment