অমৃতা ঘোষ মন্ডল,
ডুয়ার্স উওরবঙ্গে অবস্থিত একটি সুনামধন্য পর্যটন কেন্দ্র।ডুয়ার্স কথারটির অর্থ হল দরজা বা প্রবেশদ্বার। ডুয়ার্স ভারতের উওর পশ্চিম অঞ্চলের ভূটান সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত।এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও আসাম রাজ্য সংলগ্ন ও পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত।ডুয়ার্স বিগত দুই দশক ধরে খুবই জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে।
এখানকার কিছু বিশেষ জায়গা হল বক্সা টাইগার রিসার্ভ, বক্সা ফর্ট, গরুমারা জাতীয় উদ্যান,চেলসা,জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান,রাজাভাতখাওয়া, বিন্দু,হাসিমারা, গোঁরবাতান , সুনতেলখোলা,সামসিং,রকি আইল্যান্ড, ঝালং ইত্যাদি।
পশ্চিমবংঙ্গের উওর দিকে বক্সা পাহাড় এলাকায় অবস্থিত এই বক্সা জাতীয় উদ্যান টি। এই জাতীয় উদ্যান টি তে একটি বাঘ সংরক্ষন কেন্দ্র বা বক্সা টাইগার রিজার্ভ রয়েছে। উদ্যানের আয়তন প্রায় ৭৬০ বর্গ কিলোমিটার। বক্সা উদ্যানের মধ্যে বক্সা দূর্গ নামে একটি পুরোন দূর্গ আছে। দুর্গ টির আয়তন প্রায় ২৬০০ বর্গফুট।
দূর্গটিতে ব্রিটিস যুগে একবার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু কে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এছাড়া এই উদ্দ্যানের মধ্যে একটি শিব মন্দির আছে। মানুষজন এই মন্দির টি কে খুব পবিত্র মনে করে।
উওরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলের জলদাপাড়া, চাপড়ামারি,গরুমারা রেঞ্জের মধ্যে পড়ে এই গরুমারা জাতীয় উদ্যান টি।এই বনভূমির আয়তন প্রায় ১,৩০০ বর্গকিলোমিটার।
এই গোরুমারা উদ্যান এ প্রচুর বন্য পশু পাখি দেখতে পাবেন। যেমন হাতি,গন্ডার,গউর,হরিণ, বুনো শুয়োর,ময়ূর প্রভৃতি পশু পাখি রয়েছে। বনের প্রান্ত দেশে রাভা,রাজবংশী,মেচ, কোঁচ,ওরাও,মুন্ডা,টোটো উপজাতী বাস করে।গোরুমারার মধ্যে দিয়ে তিস্তা,তোর্সা,মালঙ্গী, জলঢাকা,রায়ডাক, প্রভৃতি নদ নদী বয়ে যায়।
পশ্চিমবঙ্গের অরণ্য মানচিত্রে জলদাপাড়ার স্থান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। জলদাপাড়া এক শৃঙ্গ গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। লুপ্তপ্রায় হগডিয়ারও মাঝে মধ্যে দেখা যায় এই রহস্য অরণ্যে।এখানে হাতি সাফারির ব্যবস্থা আছে। যারা ভয় পান তারা ডে-ভিজিট করতে পারেন। সকাল ১০ টা -২টা পর্যন্ত এই ব্যবস্থা আছে। জলদাপাড়ার হলং বনবাংলো গুলি হল ভারতবর্ষের সেরা বাংলো গুলির মধ্যে একটি।এই বন বাংলো তে রাত কাটাতে হলে আগে থেকে বুকিং করতে হবে।যারা এলিফ্যান্ট রাইডিং করতে চান তারা চলে আসুন মাদারিহাটে। আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করুন ও হাতির পিঠে চেপে অরণ্যের শোভা উপভোগ করুন।
রাজাভাতখাওয়া বক্সা টাইগার এর মধ্যে অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম। এখানে যাওয়ার জন্য কোন আলাদা পারমিট লাগে না। কিন্তু অনেক ভিতরে যেতে গেলে রেজিস্টার ফী দিতে হয়।রাজাভাতখাওয়া বিশেষত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর জন্য বিখ্যাত।
রোজকার কর্ম ব্যস্ততার জীবনে একটু আরাম খুঁজে নিতে অবশ্যই আসুন এই সূন্দর পাহাড়,নদী,জঙ্গল এর সমন্বয় গঠিত এই ডুয়ার্স এর এই সুনতেলখোলা তে।ছোট্ট পাহাড়ী গ্রাম এই সুনতেলখোলা। নেপালি ভাষায় সুনতালের অর্থ হল কমলালেবু আর খোলার অর্থ হল ছোট নদী। চারিদিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই মন কারে যে এখানে না এলে আপসোস থেকে যাবে।ছোট বড় চা বাগান ও ঘন জঙ্গলে মোরা এই উঁচু নিচু পাহাড়ে বেষ্টিত জায়গা টি মন কে প্রানবন্ত করে তোলে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই সুনতেলখোলা। নুরি পাথরের মাঝখান দিয়ে বয়ে আসা ছোট্ট নদী, পাটাতন বেষ্টিত একটি ঝুলন্ত সেতু,এর গা ঘেঁষে চলে গেছে ঘন জঙ্গলের রাস্তা।আপনার সর্বক্ষনের সাথি এই মূর্তি নদী ও উঁচু পাহাড় থেকে ঢাল হয়ে নেমে আসা ঘন জঙ্গল আর উরন্ত পাখিরা।
এলাচ ও চা এর গন্ধ উপভোগ করতে করতে এই জঙ্গলের মাধুর্য কে এনজয় করবেন সামসিং আসলে।সামসিং সুনতেলখোলা থেকে ৯ কিমি।এখানেও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এর হাতছানি। এখান থেকে আরো ৩ কিমি হল রকি আইল্যান্ড।মূর্তি নদীর ধারে পাহাড় আর জঙ্গল ঘিরে এই রকি আইল্যান্ড।এখান থেকে গাইড নিয়ে চলে যেতে পারেন নাগাভ্যালি।
সুনতেলখোলা, সামসিং, রকি আইল্যান্ড যে কোন এক জায়গায় থাকলেই তিনটি জায়গা ঘুরে নেওয়া যায়।
চালসা থেকে কুমানি হয়ে পথ গিয়েছে ঝালং এ।ঝালং এর কোল ঘেষে বয়ে চলেছে জলঢাকা নদী।ঝালং থেকে পাহাড়ি পথে ছোট গ্রাম প্যারেন হয়ে ভূটান সীমান্তে ভারতের শেষ জনপদ বিন্দু। ঝালং থেকে বিন্দুর দূরত্ব ১৩ কিমি। ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম বিন্দু। আকাশ পরিস্কার থাকলে বিন্দু থেকে হিমালয়ের বরফশৃঙ্গ দেখা যায়।
এই রকম মনোরম প্রকৃতির সৌন্দর্য যদি উপভোগ করতে চান তাহলে অবশ্যই ঘুড়ে আসুন সংক্ষিপ্ত আর ছিমছাম ভ্রমণ-ডুয়ার্স।
Be the first to comment