ব্রততী ঘোষ
গ্রীষ্মকাল শুরু হতেই প্রকৃতি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আর সেটা ভালো মতোই টের পাচ্ছেন সবাই। এই সময়ে মৌসুমের রোদে শহরের রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করাটা বেশ কষ্টকর। তাই শরীরকে ঠাণ্ডা করতে ঠান্ডা জাতীয় খাবার, বিশেষ করে জ্যুস বা শরবতের প্রতি ঝোক থাকে।
প্রচণ্ড গরমে শহরের যানবাহন ও পথচারীদের ঠেলাঠেলি সামলাতে গিয়ে গলা শুকিয়ে আসাটা স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে তৃষ্ণার্ত মানুষ ছুটে যান রাস্তায় বিক্রি হওয়া ঠাণ্ডা সরবতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে।
গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানীয়ের চাহিদা বাড়তে থাকায় রাস্তা-ঘাটে সহজেই দেখা মেলে আখের রস, তরমুজের-আনারসের শরবতসহ বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডা জ্যুসের দোকান। হাতের কাছে কাঙ্ক্ষিত পণ্য পাওয়ায় এসব দোকানে ক্রেতার ভিড় লেগে থাকতে দেখা যায় সারাক্ষণ। কিন্তু এই ক্রেতাদের অনেকেই জানেন না, কী দিয়ে এই শরবত বা পানীয় তৈরি? এসব শরবত তৈরির প্রক্রিয়া যে সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর ও মানবদেহের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকর, তার প্রমাণ আছে বহু। শরবতকে সুস্বাদু করার জন্য নোংরা জলের সঙ্গে কনডেন্সড মিল্ক মেশানো হয়। শরবত দেখতে সুন্দর করার জন্য দেওয়া হয় অস্বাস্থ্যকর রং এবং স্বাদে মিষ্টি করার জন্য ঢালা হয় সেকারিন, টেস্টিং সল্ট ইত্যাদি।
যেসব ফল থেকে এসব পানীয় তৈরি হচ্ছে, তা বেশিরভাগ সময়ই খোলাভাবে রেখে দেওয়া হয়। এগুলোর ওপর অনবরত পড়তে থাকে ধুলো-বালি, চলতে থাকে মশা-মাছির ওড়া-উড়ি। অনেক সময় তা ধোয়া হয় নোংরা জলে। আর বিক্রতেরা পরিবেশন করেন নোংরা হাতে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেছে, গরমের এইসব ঠান্ডা খাবার মানুষের শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া যানজটের এই শহরে গরমে মানুষ হাফিয়ে উঠেন। ফলে এসব খাবার তাদেরকে কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও শীতল রাখে।
কিন্তু এ বিষয়ে একেবারেই ভিন্ন মতামত পোষণ ডাক্তাররা। তাঁরা বলেন, এসব খাবার কখনই শরীরকে শীতল করে না। বরং আমাদের শরীরের তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কারণ, এগুলোতে রাস্তার ধুলাবালিসহ বিভিন্নরকম জীবাণুযুক্ত থাকে। এসব জীবাণু আমাদের দেহে প্রবেশ করলে প্রয়োজনীয় লবণ শরীর থেকে বের করে দেয়। এতে গরম বেশি লাগতে থাকে এবং অতিরিক্ত ঘাম হয়। ফলে আবার এসব পানীয় পান করার ইচ্ছা জাগে মনে।
ঠাণ্ডা শরবতের জন্য হয়তো সাময়িকভাবে মনে হতে পারে শরীরও ঠাণ্ডা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা পুরোটাই মানসিক। আবার গরমে হুটকরে ঠাণ্ডা জল পান করায় শরীরের তাপমাত্রারও হেরফের হয়। ফলে ডাইরিয়ার মতো রোগ-ব্যধি দেখা দিতে পারে। অনেকেই বলেন, রাস্তার এই ঠাণ্ডা পানীয়তে বরফ দেওয়া হয়, তা মাছ সংরক্ষণে ব্যবহৃত বরফ। ওই বরফ মিশ্রিত জল খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে বলেও মতামত প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
নিউট্রিশনিস্টরা বলেন, ফল খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আর গরমে তা খাওয়াও প্রয়োজন। কিন্তু রাস্তার শরবত শরীরের জন্য সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করে। নিয়মিত পেটে পীড়া, গ্যাসটিকসহ বিভিন্ন ছোট-বড় রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাই এসব খাবার বর্জন করা উচিৎ। আর বাচ্চাদের জন্য এ ধরনের খাবার একদমই খাওয়া ঠিক হবে না। সমস্যা বিকট আকার ধারণ করতে পারে।
Be the first to comment