দেবযানী লাহা ঘোষ,
ঘড়ি কাঁটার টিক টিক শব্দের সঙ্গে চলতে চলতে। ব্যস্ত জীবনের প্রেম হীন ছন্দে পা মেলাতে মেলাতে। জীবনের ছোট ছোট অনুভূতি গুলো কেমন যেন মন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
সেই অনুভূতির গোড়ায় সার আর জল দিয়ে দৃষ্টি ফেরাতে চলে এসেছে কৌশিক গাঙ্গুলীর ছবি ‘দৃষ্টিকোণ’। এ কোন দৃষ্টি? শুভ দৃষ্টি নাকি অশুভদৃষ্টি? আপনি কোন দৃষ্টি নিয়ে ছবিটি দেখবেন তার উপরই নির্ভর করবে আপনার দৃষ্টি। যা আমরা সাদা চোখে অনেকসময় দেখতে পাই না। তবে কৌশিক গাঙ্গুলীর দৃষ্টি যে শুভ থেকে শুভতরও হয়ে উঠেছে একথা হলফ করে বলাই যায়।
ভাগ্যিস ১৪ বছর ঋতুপর্ণা প্রসেনজিৎ কোনও ছবি করেন নি। আর তাই আমরা এমন সব ভালো ভালো ছবি উপহার পাচ্ছি। প্রাক্তন থেকে তাঁরা এখন বর্তমান। ২০১৬ এর পর ২০১৮। বাঙালী মেয়েদের আবারও যেন হাতে ধরে প্রেম করতে শেখাচ্ছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। আর সেই প্রেমটা বুঝতে পেরে তা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। উকিল মক্কেলের প্রেম হবে আর তাতে একটু রহস্য থাকবে না তাই কি হয় কখনও?
নানা ধরনের নানা স্বাদের ছবি কৌশিক গাঙ্গুলী আমাদের উপহার দিয়েছেন। কিন্তু সব কিছু ভেদ করে এগিয়ে গেছে ‘দৃষ্টিকোণ’।
বাঙালী পুরুষ স্ত্রীর প্রতি যতই বিশ্বস্থ থাকুক না কেন , অন্য সুন্দরী মহিলার প্রেমের ইসারাতে সাড়া না দিয়ে পারবেন না। আর সেই মহিলা যদি সুন্দরী, বিদূষী আর স্মার্ট হন তাহলে তো আর কথাই নেই।
চিত্রনাট্যের গতির সঙ্গে পরিবেশ এতো সুন্দর মিশে গেছে ঘটনাগুলো যেন জীবন্ত মনে হচ্ছে। ওনার গল্প বলার স্টাইল এতো সুন্দর দু’ঘণ্টা কুড়ি মিনিট কীভাবে কেটে গেলো বোঝাই গেলো না।
বিশ্বস্থ স্বামী যদি অন্য নারীতে আসক্ত হয়, আর স্ত্রী হয়ে সেটা বুঝেও যদি তাকে কিছু বলা না যায় তাহলে সেই স্ত্রীর মনে কী ঝড় ওঠে তা বোঝাই যায়।
প্রসেনজিতের স্ত্রীর চরিত্রে চূর্ণী গাঙ্গুলীর অনবদ্য অভিনয় দর্শককে ভাবিয়ে তুলবে বারংবার। সারা ছবি জুড়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের গলার টোন আর তার প্রেমের আবেগে এক অন্য ঋতুতে পরিণত হয়েছিলো। এতো ম্যাচিওরড অভিনয় অনেকদিন পর ঋতু উপহার দিলো দর্শকদের। বয়স যত বাড়ছে তাঁর অভিনয়ের ধার আরও শাণিত হচ্ছে। প্রতিটা ছবির চরিত্র নিয়ে তিনি আলাদা করে ভাবছেন। তাঁর লুক থেকে শুরু করে তাঁর প্রেজেন্টেশন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন এই চরিত্রে তিনি শেষ কথা। তবে টলিউডের পাওয়ার কাপলকে নিয়ে ছবি করতে গেলে তার প্রতিটা পদক্ষেপ ভাবনা চিন্তা করে করতে হয়। তা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালক।
ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন অনুপম রায়। আবারও তিনি প্রমান করেছেন তিনি সকলের মনের কথা বলতে পারেন তাঁর কথা ও সুরের মাধ্যমে। কাউকে বিরক্ত না করেও তিনি বারবার বাধ্য করছেন তার গান গুলো শুনতে।
গান শুনে আর ছবির ট্রেলার দেখে তো সব বোঝা যায় না। প্রেমকে কেন্দ্র করে ছবির মধ্যে যে রহস্য আছে তা জানতে হলে একবার হলমুখী হতেই হবে।
আর কৌশিক গাঙ্গুলী, কৌশিক সেন এবং দোলন রায়ের অভিনয় দেখে বলতে হবে এদের মধ্যে ভালো কে? তবে জীয়ন আর শ্রীমতীর প্রেমকে উপলব্ধি করতে হলে এই ছবি একের অধিকবার দেখতে হবে।
দর্শকদের জন্য ছবি নিয়ে জীয়ন কী বলছে শুনব তাঁর কাছ থেকে।
Be the first to comment