পল মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুর
জেলায় নেশা সামগ্রীর তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। কী নেই সেই তালিকায়? কাশির সিরাপ, আঠা, ঘুমের ওষুধ, ব্যাথার ইঞ্জেকশন থেকে ব্রাউন সুগার! সন্ধে নামলেই নেশাখোরদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠছে কিছু নির্জন জায়গা। সেই তালিকায় কলেজপড়ুয়া থেকে শিশু বাদ যচ্ছে না কেউই। প্রশাসনিক ঢিলেমিতে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে নেশা আসক্তদের সংখ্যা। জেলা পুলিশের তত্পরতায়য় কার্যত চোলাই শূন্য হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ এলাকা। বহু এলাকায় ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে চোলাইয়ের ঠেক। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ভাটিখানা। কিন্তু পিছু ছাড়ছে না, উইথড্রোল সিনড্রোম এর অভিশাপে বিপজ্জনকভাবে ঘুমের ওষুধ মরাফিনজাত কাশির সিরাপ, ব্রাউন সুগারের মতো এই সব নেশা।
কিন্তু কোথায় চলে এই ঠেক? হুঁশ আছে কি প্রশাসনের? স্কুল, কলেজের মাঠে, সিনেমা হল, ফাঁকা নির্জন জায়গা পেলেই বসে এই নেশার আসর। সেখানে নেশা হয় মূলত গাঁজা ও আঠার। দক্ষিন দিনাজপুরের হিলি, বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর সহ বহু জায়গায় দিনে দিনে বাড়ছে নেশাগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা। বালুরঘাট শহরের বাসস্টপ, কলেজপাড়া নদীপাড়, শশ্মান এলাকা পার্ক অন্যদিকে গঙ্গারামপুরের হাইস্কুল পাড়া, রবীন্দ্রভবন এলাকা, গলাকাটা কলোনি, গঙ্গারামপুর বুনিয়াদপুর চৌমাথা মোড় সহ গ্রামে গঞ্জে বহু এলাকায় একদম সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে এই মাদক দ্রব্য। মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে মিলছে এক পুরিয়া ব্রাউন সুগার।
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য থাকা সত্বেও শুধুমাত্র নজরদারির অভাবে সমানেই চলছে রমরমিয়ে ব্যবসা। ওষুধের দোকানগুলিও ঘুমের ওষুধ ও কাশির সিরাপ বেঁচে লাভের অঙ্ক দিনে দিনে বাড়িয়ে নিচ্ছে। এলাকা জুড়ে চোলাই মদ শূন্য হলেও নেশা কিন্তু পিছু ছাড়ছে না। নেশায় এত পরিমাণে আসক্ত করে দিয়েছে যে ঘুম না এসে মাথা ঝিমঝিম করছে। ফলে একটি ঘুমের জন্য মানুষ ছুটছে ওষুধের দোকানে। কেউ ঘুমের ওষুধ চাইছেন, কেউ বা কাশির সিরাপ। ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নেই। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই চলছে ওষুধ বিক্রি। ফলে ওষুধ ও কাশির সিরাপ বিক্রি করেই সমানে লাভবান ওষুধ বিক্রেতারা পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রাউন সুগারের রমরমা ব্যাবসা। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিপজ্জনক নেশার তালিকায় রয়েছে আঠা। আঠার নেশা আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্কুল পড়ুয়া, কলেজ পড়ুয়া যেমন আছে শিশুরাও নেশায় চূড়ান্তভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। একটি প্লাস্টিকের মধ্যে টিউব থেকে আঠা ঢেলে সেটা নিশ্বাসের সঙ্গে নাকমুখ দিয়ে টেনে আচ্ছন্ন থাকছে আসক্তরা।
মুদিখানা থেকে পান সিগারেটের দোকান সর্বত্রই মেলে এই আঠা। নেশা আসক্তদের কথায়, পকেটে ভরে কোথাও আড়ালে চলে গেলেই হলো। নেশা করার জন্য কোনও সমস্যা নেই। চাই স্রেফ একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট। এই নেশার সঙ্গে চলছে বেশ কিছু কাফ সিরাপও। চায়ের দোকানে বসে, গোপনে দিব্যি চলছে সেই সব নেশার ঠেকও। অবৈধভাবে কাফ সিরাপ পাচারে জেলায় বহু বার অনেক পাচারকারীরাও ধরা পড়ছে পুলিশের জালে। তবুও হাল ফেরেনি এই ব্যবসায়।
জেলা পুলিশের কর্তাদের বক্তব্য, যে সমস্ত দোকানগুলির নেশার ওষুধ দিতে অস্বীকার করেছেন সেই সমস্ত এলাকায় বেড়ে গিয়েছে ব্রাউন সুগারের বিক্রি। গত কয়েক বছরে গ্রেফতার করা হয়েছে অনেক নেশাখোরদের। পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছে বহু ড্রাগ সেলারও।
Be the first to comment