নীল ব্যাগের ভিতর কমলা রঙের ট্যাবলেটগুলি দেখেই চোখ কপালে ওঠে শুল্ক দফতরের কর্তাদের। এগুলি তো যে সে মাদক নয়! সাঙ্ঘাতিক নেশা এবং যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ইয়াবা ড্রাগ পাচার করছে ছয় যুবক। গোপন সূত্রে খবর ছিলই, এ বার হাতে নাতে ছয় পাচারকারীকে গ্রেফতার করল শুল্ক আধিকারিক এবং পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম আবদুল রশিদ ওরফে জনি (২৫) , আবদুল শাহিদ (৫০), আবদুল জাহিদ (৩২), মহম্মদ রাজু আহমেদ (২৬), নারায়ণ মণ্ডল ওরফে নারাণ (৩৫) এবং সাবির ওরফে জুয়েল (২৭)। এদের মধ্যে জনি, শাহিদ এবং জাহিদের বাড়ি একবালপুরে। নারাণ এবং সাবির মালদার বাসিন্দা। মহম্মদ রাজু আহমেদের বাড়ি বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জে। ধৃতদের কাছ থেকে ২০০০-এরও বেশই ট্যাবলেট (ওজন প্রায় ১৮৯ গ্রাম) উদ্ধার হয়েছে। এই ছ’জনকে আজ, শনিবার আদালতে তোলা হবে।
কী এই ইয়াবা (Yaba) ড্রাগ?
নেশার জগতে খুবই নামডাক রয়েছে এই ইয়াবা ড্রাগের। আগে এর নাম ছিল ইয়ামা। ঘোড়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হত ইয়ামা। ১৯৯৬ সালে এর নাম বদলে হয় ইয়া বা, যাকে এককথায় উত্তেজক ট্যাবলেট বা Crazy Pills বলা হয়। এই ট্যাবলেটগুলি মেথঅ্যাম্ফিটামিন এবং ক্যাফেইনের মিশ্রণ। কখনও নেশার মাত্রা বাড়তে এর সঙ্গে হেরোইন মেশান হয়।
কোথায় মেলে এই ড্রাগ- মূলত থাইল্যান্ডে এই ড্রাগের খুব জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেখানে এর নাম “chocalee” । থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, বাংলাদেশ থেকে এটি চোরাচালান করা হয়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ড্রাগ।
লাল, কমলা এবং সবুজ এই তিন রঙে ছোট ছোট বড়ির মতো (৬ মিলিমিটার) এই ট্যাবলেটগুলির গায়ে ইংরাজিতে ‘R’ বা ‘WY’ লেখা থাকে। নানা রকম দামে এই ট্যাবলেট পাওয়া যায়, তবে অন্যান্য ড্রাগ জাতীয় ট্যাবলেটগুলির মধ্যে ইয়াবা-র দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। শুল্ক আধিকারিকদের মতে কম দামি ইয়াবা মানেই সেটা ভেজাল।
বাংলাদেশে এই ট্যাবলেটের খুব চল রয়েছে। সেখান থেকে মায়ানমারে এই ট্যাবলেট পাচার করা হয়। প্রথম দিকে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট হিসেবে ইয়াবা বাজারে বিক্রি হলেও পরে দেখা যায় অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।
এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাকি হেরোইনের থেকেও মারাত্মক। ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হজমের সমস্যা এবং মানসিক অবসাদের পাশাপাশি ফুসফুস, কিডনি এবং হৃদস্পন্দনের ক্রিয়া থামিয়ে দিতে পারে ইয়া বা। দীর্ঘদিন ইয়াবা খেতে থাকলে স্কিৎজোফেনিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়, আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ে। তা ছড়া দেখা দেয় আরও নানা ধরণের মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা।
এই ধরণের ড্রাগ কলকাতার মতো শহরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের হাতে আসতে বেশি সময় লাগবে না। এমনিতেই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত নেশার প্রকোপ প্রশাসনের মাথা ব্যাথার কারণ। তার উপর ইয়াবা-র মতো ড্রাগ শহরে থাবা বসালে তার ফলও হবে মারাত্মক, এমনটাই মনে করছেন পুলিশ কর্তারা।
Be the first to comment