এবার দুর্গাপুজোয় মন্ডপ থাকবে দর্শক বিহীন। মহামারী আবহে নজিরবিহীন রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। করোনা সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে রাজ্যের সব পূজো মন্ডপকে নো এন্ট্রি জোন হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। ফলে কোন ও দর্শক এবার আর মণ্ডপে বা তার দশ মিটারের মধ্যে ঢুকতে পারবেন না। যেভাবে পুজোর বাজার এবং দুর্গাপুজোর তৃতীয়য়ার সকালে রাস্তায় এবং মণ্ডপে যে ভিড় হচ্ছে, তাতে সংক্রমণ পুজোর পরে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়েই আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল।
যদিও হাইকোর্টের এই রায়ে যথেষ্টই বেকায়দায় পুজোর উদ্যোক্তারা। কলকাতায় পুজো গুলি নিয়ে নিয়ে গঠিত সমন্বয় কমিটি, ফোরাম ফর দুর্গাপুজোর কর্তারা মনে করছেন, আদালত এ ব্যাপারে আরেকটু নরম হতে পারত কারণ একেবারে পুজো শুরুর শেষ মুহূর্তে এত আয়োজন, এই রায়ের ফলে ভেস্তে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ২৫ জন পুজোর পাঁচদিন দায়িত্ব সামলাতে মণ্ডপে ঢুকতে পারবেন বলে যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছে, তা নিয়েও তারা বিভ্রান্ত। তাদের বক্তব্য, এত মানুষ একই সঙ্গে যুক্ত থাকেন পুজোয়, সেখানে ২৫ জনে তা বেঁধে ফেলা সমস্যার।ভিড় দেখে যে আতঙ্ক হচ্ছে সে কথা স্বীকার করেছেন হাইকোর্ট বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিন শুনানিতে জানানো হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে ভিড়ের ছবি দেখা যাচ্ছে, তাতে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে, কড়া পদক্ষেপ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই হাইকোর্টের। একদিকে দর্শক শূন্য পূজা মন্ডপ নিশ্চিত করতে যেমন নো এন্ট্রি চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে, তেমনই শুধুমাত্র উদ্যোক্তাদের মণ্ডপে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু সেখানেও যাতে কোনরকম ছল চাতুরি না হয় তা নিশ্চিত করতে চেয়েছে আদালত।
তাই বড় বাজেটের পুজোর ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ জন ও ছোট পুজোর ক্ষেত্রে ১৫ জন উদ্যোক্তার নামের তালিকা আগাম পুলিশকে দিয়ে দিতে হবে। সেই তালিকা অনুযায়ী কে কখন মণ্ডপে থাকবেন, তা জানাতে হবে পুলিশকে। পুলিশ সেই অনুযায়ী তাদের মণ্ডপে ঢোকা বেরোন নিশ্চিত করবে।
এদিন শুনানির শুরুতেই হাইকোর্ট বর্তমান পরিস্থিতিতে পুজো উৎসবের অনুমতি দেওয়া নেই বিরক্তি প্রকাশ করে ভৎসনা করে রাজ্যকে। পরে অবশ্য হাইকোর্টের বক্তব্য, রাজ্যের ভিড় নিয়ন্ত্রণে সদিচ্ছা রয়েছে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। তাই হাইকোর্টকে পদক্ষেপ করতে হচ্ছে।
বড় পুজোর ক্ষেত্রে মণ্ডপ থেকে ১০ মিটার দূরে ব্যারিকেড করতে হবে। আর ছোট পুজোর ক্ষেত্রে মণ্ডপ থেকে পাঁচ মিটার দূরে ব্যারিকেড বা দড়ি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। যাতে কোনো দর্শক তার মধ্যে ঢুকতে না পারে হাইকোর্টের লক্ষ্য কোনভাবেই জমায়েত করতে না দেওয়া।পুজোয় পুলিশ যথাযথভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারল কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে।
Be the first to comment