আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জির। ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মহালয়া। কাশফুল আর পেঁজা মেঘ আহ্বান জানাচ্ছে মাকে। শরত-এর শিউলি সকাল সূচনা করছে দুর্গোৎসবের। ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া ও বিশ্বকর্মা পুজো একই দিনে। গঙ্গার বা নিকটবর্তী জলাশয়ের ঘাটে ঘাটে পিতৃ তর্পণের চেনা ছবি। একথা সকলেরই জানা যে এবার আর মহালয়ার ষষ্ঠ দিনে দুর্গা পুজোর ষষ্ঠী নয়। আশ্বিন মাসের দুটি অমাবস্যা অর্থাৎ মলমাস হওয়ার কারনে মা এবার আসছেন একমাস বাদে। ২২ অক্টোবর দুর্গা পুজোর ষষ্ঠী।
করোনা আবহে এবারে পুজোর বাজেটে এবার বড়-ছোট সব ক্লাবই কাটছাঁট করেছে। কিন্তু তাতে মাথায় হাত কুমোরটুলি বা পটুয়াপাড়ার মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে পুজোর সঙ্গে যুক্ত সকল শিল্পী কলাকুশলীদের। এঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে “ফোরাম ফর দুর্গোৎসব”। কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় যখন চারিদিক স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এঁরা কখনও পটুয়াপাড়ায় মৃৎশিল্পী পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে গেছেন। আবার কখনও কুমোরটুলি এমনকি দক্ষিন ২৪ পরগণার এনায়েতপুরের শোলা শিল্পী পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন। নিয়ে গেছেন খাদ্য সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
১৬ সেপ্টেম্বর বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ফোরামের পক্ষ থেকে সভাপতি কাজল সরকার ও সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, মহালয়ার পুণ্য তিথিতে কুমোরটুলির ৭০ জন মৃৎশিল্পীর হাতে ৪ হাজার টাকা করে তুলে দেবো আমরা। প্রশ্ন ওঠে এই করোনা পরিস্থিতিতে পুজো নিয়ে এত মাতামাতি করা কি ঠিক হবে? ফোরামের তরফ থেকে বলা হয় দুর্গাপুজো আরও বেশি দরকার প্রান্তিক মানুষের জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুজোর সঙ্গে যুক্ত শিল্পী কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।
এবারে পুজো হবে “অন্যভাবে”। আলোর চাকচিক্য থাকবে কম। প্যান্ডেল হবে খোলামেলা ও ছোট। প্রতিমাও হবে তুলনামূলকভাবে ছোট। মা আসবেন এবং এখনও তাঁর আগমনের যেহেতু এক মাস বাকি তাই করোনা অসুরকে স্তব্ধ করে স্বমহিমায় মাতৃ আরাধনা হবে এটাই আশা করা যায়।
২৫ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুজো কমিটিগুলোর বৈঠক। তারপরেই ঠিক হবে গাইডলাইন। তবে ইতিমধ্যেই ফোরাম বেশকিছু বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিয়েছেন। সেগুলি হল-
১. সামাজিক দূরত্ব মেনে ঠাকুর দেখতে হবে।
২. স্যানিটাইজার ও মাস্ক আবশ্যিক।
৩. একটি লাইন করেই পুজো দেখতে হবে।
৪. স্যানিটাইজড টানেলের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
৫. কাটা ফল নয়, মাকে দিতে হবে গোটা ফল।
৬. ভোগ ও অঞ্জলির জন্য করা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা।
৭. সবশেষে মায়ের বিসর্জনেও লোক থাকবে কম।
৮. দেবী দুর্গার নিরঞ্জনের সময় সিঁদুর খেলা একটা আবশ্যকীয় রীতি। কিন্তু এবারেও সেক্ষেত্রে পুরোপুরি বন্ধ না করে অল্প মহিলাদের মধ্যে তা সীমিত রাখবে ক্লাবগুলি।
সবশেষে ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়,পুলিশের উপর আমাদের বিশ্বাস এবং আস্থা আছে। তাঁরা যেভাবে অন্যান্য বছর ভিড় নিয়ন্ত্রন করেন এবছরের অন্য রকমের পুজোয় স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাঁরা যে বিশেষ ভূমিকা নেবেন সেকথা বলাই বাহুল্য। ফোরাম ফর দুর্গোৎসব আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় বর্তমান পরিস্থিতিতে রক্ত সংকট মেটাতে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছে। নেতাজি ইন্ডর স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরের নাম দেওয়া হয়েছে “মায়ের জন্য রক্তদান”। এক্ষেত্রেও করোনাবিধি মেনে রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হবে।
Be the first to comment