রাজ্যে অনেক উৎসবের সঙ্গে এবার যুক্ত হতে চলেছে ‘পঠন উৎসব’। রাজ্যের প্রাথমিক বিদালয়গুলিতে শুরু হচ্ছে ‘পঠন উৎসব’। বুধবার পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশনের প্রোজেক্ট ডাইরেক্টর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘রিডিং ফেস্টিভ্যাল বা পঠন উৎসব’ চালুর নির্দেশিকা জারি করেছেন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ম করে এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষজন থেকে শুরু করে অভিভাবক অভিভাবিকা, গ্রাম শিক্ষা কমিটির সদস্যদের সামনে বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা নিজেদের পঠন দক্ষতা প্রদর্শন করবে। এর জন্য বিদ্যালয়গলিকে এক হাজার টাকা দেওয়া হবে। পঠন উৎসবকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক থেকে শুরু করে সমস্ত শিক্ষক সংগঠন।
এ বিষয়ে ঘাটাল চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সৌমেন দে বলেন, পড়ুয়াদের পঠন দক্ষতা বা পঠনশৈলী প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। জেলা থেকে নির্দেশ আসার পরই প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” এই ধরনের নির্দেশিকা কেন? বিদ্যালয় দফতরের পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চবিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা দেওয়া অনেক পড়ুয়াই পাঠ্যপুস্তক দেখে পড়তে পারে না। তারা না পারে ঠিকমতো কোনও গল্প পাঠ করতে বা বলতে। না পারে কোনও কবির কবিতা আবৃত্তি করতে বা পাঠ করতে। প্রকাশ্যে সবার সামনে ভয়ে—ভীতিতে কুঁকড়ে যায় তারা। পাঠ্যপুস্তকের কোনও অংশ পাঠ করতে পারে না। যেন মনে হয় অক্ষর পরিচয়ই হয়নি পড়ুয়াদের। ফলে উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে সমস্যায় পড়ে যায় বহু পড়ুয়াই। প্রাথমিক স্তরে ভয়ভীতি যাতে কেটে যায় এবং তার সঙ্গে পঠন দক্ষতা বৃদ্ধি পায় তারই জন্য এমন অভিনব উদ্যোগ সমগ্র শিক্ষা মিশনের।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, দুই বছর করোনাকালে পাঠবিমুখ হয়ে পড়েছে পড়ুয়ারা। বহু পড়ুয়াই বই থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেই অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে এমন অভিনব উৎসবের আয়োজন বলে মনে করছে জেলার শিক্ষামহল। ‘পঠন উৎসব’কে সামনে রেখে পড়ুয়াদের মধ্যে যেমন পাঠ্যপুস্তক পড়ার উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে ঠিক তেমনই শিক্ষকরাও দ্বিগুণ উৎসাহে পড়ুয়াদের পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধি করতে উদ্যোগী হবেন।
দাসপুরের অবসরপ্রাপ্ত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক উমাশংকর নিয়োগী থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক নবকুমার মেট্যা বলেন, এটা একটা দারুণ উদ্যোগ। এই উৎসবের জেরে পড়ুয়াদের বই পাঠে যেমন মনোনিবেশ বাড়বে, তেমনই পঠন দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।” সমগ্র শিক্ষা মিশনের এই উদ্যোগকে বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ঘাটালের ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোমেশ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এই ধরনের ভাবনা-চিন্তাই তো বৈপ্লবিক। এই উদ্যোগের প্রশংসার কোনও ভাষা নেই।”
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি অনিমেষ দে ও এবিপিটিএ র জেলা সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডল। ধ্রুববাবু বলেন, “আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”
Be the first to comment