একটু ডিমের ঝাল

Spread the love

চিত্রলেখা দেঃ

জগার পরণে একটা রংচটা হাফপ্যান্ট আর গায়ে বেঢপ সাইজের একটা গেঞ্জী। কোন কাজের বাড়ি থেকে মা এটা চেয়ে এনেছিল কে জানে?? যদিও গায়ে গেঞ্জীটা বড় হয়েছিল বলে জগা পরতে অস্বীকার করেছিল,কিন্তু মা বলল,গরীবঘরে নাকি জামার মাপ বলে কিছু হয়না!!
জগা উনুনের ধারে বসে হাঁড়িটার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।না ভাত নয়,একহাঁড়ি ডিমসিদ্ধ করছে মা,বিকেলে মেলায় নিয়ে যাবে বিক্রী করার জন্য।কিছুটা সিদ্ধ,কিছুটা ঝাল।ও জানে এই ডিম,ঝাল-মশলা সবই ধার বাকিতে কেনা,ডিমগুলো বিক্রী করে মা দেনা শুধবে।
আগের দিনের পান্তা খেয়ে ওরা চলল।মায়ের মাথায় ডিমের ঝালের হাঁড়ি,হাতে ডিমসিদ্ধর বালতি ধরা।জগার হাতে শালপাতা,নুনের কৌটো,ছুরি ,হ্যারিকেন আর একটা বসার চাটাই।বড় বটগাছটার নীচে বসে ওরা,,,
কত লোকের আনাগোনা মেলায়,জগা ছোট ছোট হাতে ডিম ছাড়িয়ে মাকে দিচ্ছে ,মা কেটে,নুন মাখিয়ে খদ্দেরকে দিচ্ছে।
ডিমের ঝালটার দিকে তাকিয়ে বড় লোভ হচ্ছে জগার,লাল টকটকে ঝালের মধ্যে সোনালী ডিমগুলো ডুবে রয়েছে যেন।নাক দিয়ে ডিমের ঝালের সুবাস কিছুটা টেনে নেয়,আঃ কি স্বাদ!! মা ওকে একটু চাখতে দিয়েছিল শুধু।বলল,খদ্দের লক্ষী।আগে ওরা খেলে তবে জগাকে খেতে হয়।
খদ্দের যখন একেবারেই থাকছে না,জগা মেলাটা টহল দিয়ে আসছে।কিন্তু ওর মন পড়ে আছে সেই ডিমের ঝালের দিকে।ও চুপচুপ করে ঠাকুরকে ডেকেছে যেন দুটো ডিম অন্ততঃ বিক্রী না হয়!! কিন্তু,,,,,,,,,,,

ঘরের মাচাটার ওপর ঘুমিয়ে পড়েছিল জগা,কেঁদে-কেঁদে চোখদুটো লাল হয়ে গিয়েছিল।মা সব ডিমগুলো বিক্রী করে দিল,একটাও রাখল না ওর জন্য!! আজ ও আর কিচ্ছু খাবে না,চুপ করে ঘুমাবে।
মায়ের ডাকে ঘুমটা ভাঙে জগার,উঠে চোখটা রগড়ে দেখে মা মেঝেতে একথালা গরম ভাত বেড়ে দিয়েছে আর পাশে দুটো গরম ডিমের ঝাল!!জগার মুখে যে হাসিটা ফোটে,সেটাকেই বোধহয় লাখ টাকার হাসি বলে।

জগার মা জগাকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে,ছেলের আনন্দের চোখের জল,নিজের কষ্টের চোখের জলের নোনতা স্বাদের সঙ্গে মিশে গেল ডিমের ঝালের স্বাদ।ওরা ডিমের প্রোটীন,ক্যালশিয়াম ,ভিটামিনের কথা বোঝে না,,,,,শুধু বোঝে একটু ডিমের ঝাল হলে একথালা ভাত খাওয়া যায় গোগ্রাসে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*