সবুজ ঝড়ে উড়ে গেলো পদ্মফুল, ভোট বাড়িয়ে চর্চায় বামেরা

Spread the love

সবুজ রঙে রঙিন কলকাতা ৷ যদিও এটাই প্রত্যাশিত ছিল রাজনৈতিক নেতা থেকে বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের কাছে ৷ কিন্তু কৌতুহল ছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা নিয়ে ৷ বিরোধীদের কী পরিস্থিতি হয়, সেদিকেও নজর ছিল মানুষের ৷ দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পৌরনিগমের ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ১৩৪টি আসন ৷ বিজেপির দখলে গিয়েছে ৩টি আসন ৷ বামফ্রন্ট জিতেছে ২টি আসনে ৷ কংগ্রেস ২টি আসনে জয় পেয়েছে ৷ তিনটি আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা ৷

এই ফলাফলকে যদি ২০১৫ সালের ভোটের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচার করা যায়, তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, গত পৌরভোটের চেয়ে ২০টি আসন এবার বেশি পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ৷ আর প্রতিটি বিরোধী দলের শক্তিক্ষয় হয়েছে ৷ বামফ্রন্ট ১৫ থেকে কমে ২ হয়েছে ৷ বিজেপি ৭ থেকে কমে হয়েছে ৩ ৷ কংগ্রেস ৫ থেকে কমে ২ হয়েছে ৷

কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড়সড় পরিবর্তন হয়েছে ৷ তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধিতার জায়গায় বাম-কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে এগিয়ে এসেছে বিজেপি ৷ মাস কয়েক আগে এই রাজ্যে যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, সেই ভোটে আসন সংখ্যা ও ভোট শতাংশের হিসেবে বিজেপিই দ্বিতীয় স্থানে ছিল ৷ আর তারাই এবার প্রধান বিরোধী দল ৷ অন্যদিকে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন ও ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে শূন্যহাতে ফিরতে হয়েছে বামেদের ৷ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী লোকসভায় জিতলেও বিধানসভায় শূন্যই পেয়েছে রাহুল-সোনিয়ার দল ৷

সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিজেপির ফল সামগ্রিকভাবে খারাপই হয়েছে বলা যায় ৷ তবে এই ফলকে খারাপ বলে মানতে চায় না বিজেপি। দলের নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, এই ফলে মানুষের রায় প্রতিফলিত হয়নি ৷ ভোটে সন্ত্রাস হয়েছে ৷ এই ফলকে বিকৃত গণতন্ত্রের ফলাফল বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি ৷

অন্যদিকে আশার আলো দেখা যাচ্ছে বাম শিবিরে ৷ পৌরভোটে অন্তত শূন্য হাতে ফিরতে হল না তাদের ৷ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ভোট শতাংশ বেড়েছে বামেদের ৷ এই নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, এই ভোটের কোনও মূল্য নেই ৷ কারণ, ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে ৷ তৃণমূল, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের সিন্ডিকেট ভোট করিয়েছে ৷ তাঁর প্রশ্ন, এত সন্ত্রাস করেও কেন তৃণমূল ১০০ শতাংশে আসনে জিততে পারল না ? কেন কিছু আসনে বিরোধীরা জয় পেল ?

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, বামেদের এই ফল প্রত্যাশিত ছিল ৷ কারণ, আগের থেকে বামেরা অনেক বেশি সংগঠিত ৷ তবে এই নিয়ে উল্লসিত হলে চলবে না ৷ বরং নতুন নেতৃত্বকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে ৷ তাহলে বোঝা যাবে সিপিএম ঠিক কতটা এগিয়েছে ৷

একনজরে দেখে নেওয়া যাক ১৪৪ টি আসনের প্রতিটিতে বোরো ভিত্তিক কেমন ফলাফল করেছেন তৃণমূল, বিজেপি, বাম, কংগ্রেস ও নির্দলপ্রার্থীরা?

কলকাতা পুরসভার ১, ২, এবং ৩ নম্বর বোরোর ৯ টির মধ্যে ৯ টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৪ নম্বর বোরোর ১০টির মধ্যে ৮ টি আসনে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। ২ টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ৫ নম্বর বোরোর ১১ টি আসনের মধ্যে ৮ টিতে জয়ী তৃণমূল। একটি করে আসন পেয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস এবং নির্দলপ্রার্থী।

৬ নম্বর বোরোর ১০টির মধ্যে ১০টি আসনেই জয়ী তৃণমূল। ৭ নম্বর বোরোর ৯টির মধ্যে ৯টি আট নম্বর বোরোর ১১ টির মধ্যে ১১ টি এবং ৯ নম্বর বোরোর ১০টির মধ্যে ১০ টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে, ১০ নম্বর বোরোর একটিতে জয়ী হয়েছেন বাম প্রার্থী। যদিও বাকি ১১ টির প্রতিটিতেই জয়ের ধারা অক্ষুন্ন রেখেছে জোড়াফুল শিবির।

১১ নম্বর বোরোর ৭টি আসনের মধ্যে ৬টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বামেরা। ১২ নম্বর বোরোর সাতটির মধ্যে ৭টিতেই জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। ১৩ এবং ১৪ নম্বর বোরোতেও একই ছবি। এখানেও সাতটির মধ্যে ৭ টিতেই জয় সুনিশ্চিত করেছে শাসক দল। ছবিটা কিছুটা অন্যরকম ১৫ নম্বর বোরোতে। এখানে ৯টি আসনের মধ্যে ৬টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একটিতে কংগ্রেস এবং ২টি আসনে জয়ী হয়েছেন স্থানীয় নির্দলপ্রার্থী। কলকাতা পুরসভার ১৬ নম্বর বোরোর ৭টির মধ্যে ৭ টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।

একই সঙ্গে তিনি সাবধানবাণী শুনিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জন্যও ৷ তাঁর মতে, এবার কলকাতা পৌরনিগমের ভোটে তৃণমূলের জয় যখন প্রত্যাশিত ছিল, তখন অবাধ-শান্তিপূর্ণ ভোট করে সারা দেশে নজির গড়তে পারত শাসকদল ৷ আর তার সঙ্গে তাদের দিকে কত মানুষের সমর্থন রয়েছে, সেটাও তৃণমূলের কাছে স্পষ্ট হয়ে যেত ৷

বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ করলেও সেই অভিযোগ ভোটের দিনও উড়িয়ে দিয়েছিল তৃণমূল ৷ এদিনও সেই কথা শোনা গেল শাসকদলের নেতাদের মুখে ৷ মঙ্গলবার অসম যাওয়ার আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমাদের ল্যান্ডস্লাইড জয় এসেছে, কারণ আমরা মাটির মানুষ ৷ আকাশে থেকে কাজ করি না ৷ কলকাতা এখন সুরক্ষিততম শহর ৷ এ বার সৌন্দর্যায়নে আরও জোর দেব ৷ শহরতলিতে আরও উন্নয়ন হবে ৷’’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*