ঘূর্ণিঝড় উম্পুনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ঝড়ের দাপটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল ২৭৩টি সাবস্টেশনে। ফলে বহু জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না দীর্ঘসময় ধরে। রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর ট্যুইট করে জানায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ক্ষতি হওয়া ২৭৩টি সাবস্টেশনের মধ্যে ২৪০টি ঠিক করেছেন রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা। এর ফলে সোনারপুর, বারুইপুর, রাজপুর, নরেন্দ্রপুর, কাকদ্বীপ ও নামখানা টাউনের বিদ্যুত সমস্যার বেশ কিছুটা মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
উম্পুনের পর গত ৭২ ঘণ্টা ধরেই বিদ্যুৎহীন কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। গাছ পড়ে বহু রাস্তা এখনও অবরুদ্ধ। বিদ্যুৎ না-আসায় পাম্প চলছে না। চারিদিকে জলের হাহাকার। শনিবারও অব্যবস্থার প্রতিবাদে বেহালা, যাদবপুর, গড়িয়া, বাঁশদ্রোণী, ইএম বাইপাস-সহ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পথ অবরোধ করেন মানুষ। ব্যারাকপুর, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে অবরোধ তুলতে পুলিশকে মৃদু লাঠিচার্জ করতে হয়। পরিস্থিতি নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এটা করোনার থেকে বড় বিপর্যয়। অধৈর্য হবেন না। এইসময়ে কারও কথা শুনে বিক্ষোভ করবেন না প্লিজ। লকডাউনের জন্য লোক অনেক কম। একটু সময় লাগবে।’
আর রবিবার দুপুরে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে ট্যুইট করে জানানো হয়েছিল, ‘CESC সরকারকে জানিয়েছে, তারা যাদবপুর, সেলিমপুর, মুকুন্দপুর, সার্ভে পার্ক, পাটুলি, রিজেন্ট এস্টেট, এনএসসি বোস রোড, বেহালা চৌরাস্তা, জেমস লং সরণী, শীলপাড়া, লেকটাউন, যশোর রোড, নাগেরবাজার, রাসবিহারি কানেক্টর, বিবি চ্যাটার্জী স্ট্রিটে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।’
শুধু কলকাতাই অবশ্য নয়, স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরাও রাতভরের চেষ্টায় গড়িয়া, বাঁশদ্রোণী, কেষ্টপুর, বাগুইহাটি, তেঘড়িয়া, সল্টলেক, নিউটাউন, বারাসাত, তমলুক, এগরা, কাঁথি, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, রানাঘাট, গয়েশপুর ও কল্যাণীর মতো বহু জায়গায় পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দিয়েছে।
এরই মধ্যে ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের নেতৃত্বে সিইএসসি অফিস ঘেরাও হয় শ্রী কলোনিতে। এখনও বহু এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এলাকায় বিক্ষোভ চলছে। স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর দাবিতে শহরের বহু জায়গায় এখনও বিক্ষোভে সামিল মানুষ।
টানা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পিছনেও করোনা সতর্কতা এবং লকডাউন পরিস্থিতিকেই মূলত দায়ী করছেন বিদ্যুৎকর্তারা। গ্রাহকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘মঙ্গলবারের মধ্যে সমস্ত এলাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আমরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করছি। আমাদের অনুমানে কোনও ঘাটতি বা ফাঁক ছিল না। আসলে করোনা-লকডাউনে ফল্ট মেরামতির কাজ যে কর্মীরা করে থাকেন, তাঁরা অনেকেই যে যাঁর বাড়ি চলে গিয়েছেন। অনেকে আবার ট্রেনে, বাসে আসেন। লকডাউনের জন্য তাঁরা আসতে পারেননি। সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ কর্মীকে আমরা আনতে পেরেছি। কর্মী সমস্যার কারণেই ফল্ট সারাই না হওয়ায় সরবরাহ এখনও পর্যন্ত ১৫ শতাংশ জায়গায় স্বাভাবিক হয়নি।’ সিইএসসি-র নেটওয়ার্কের ৭০ শতাংশর বেশি ভূগর্ভস্থ। সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্কে পরিষেবা বিঘ্নিত হয়নি। ফল্ট হয়েছে ওভারহেড এবং যে সমস্ত জায়গায় ওভারহেড ও ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্কের মিশ্রণ রয়েছে, সেই সমস্ত জায়গায়।
Be the first to comment