১৮ বছরের বাঙালি মেয়ে, নাম ইউরোপা ভৌমিক। দেশের সর্বকনিষ্ঠ মহিলা বডি-বিল্ডার। বঙ্গতনয়া বলতে আমাদের বাঙালীর চোখে যে ছবি ভেসে আসে, ইউরোপা তার সাথে একদম খাপ খায় না। বাঙালি মেয়ে সম্পর্কে আমাদের চিরাচরিত ধারনাকে মুহূর্তে ভেঙে দিতে তৈরি ইউরোপা ভৌমিক।
মিষ্টি দেখতে, লম্বা চুল, টানা-টানা চোখ। হালকা মেদযুক্ত শরীর, কাট টু, প্রায় ১৪ ছুঁইছুঁই বাইসেপস। ছোট করে কাটা চুল। ৩৭ ইঞ্জির চওড়া ছাতি। ওজন ৫৫ কেজি। অবলীলায় ১৩০ কেজি ওজন তুলে ফেলার ক্ষমতা। এই হলো বাঙালী মেয়ে ইউরোপার বৈশিষ্ট্য। বডি-বিল্ডিংকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করে চলেছে।
১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে তার জন্ম। বাবা বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন। কলকাতার ভিআইপি রোডে বাড়ি। ছোটবেলায় দেখতে খারাপ, মোটা, বেঁটে ছিলো। বন্ধুদের টিটকিরি শুনতে হত। সেই জায়গা থেকে নিজেকে বডি-বিল্ডার হিসাবে গড়ে তোলা একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে সে নিয়েছে।
আর পাঁচজন মেয়ে যেখানে ওজন তোলার নামেই ভয় পেয়ে যায়, সেখানে, ধীরে ধীরে বেঞ্চপ্রেস, ওয়েট লিফটিংয়ের প্রেমে পড়ে যান ইউরোপা। ইউরোপা বলেন, ‘আমি সব সময় মানুষের চোখে একটা সম্ভ্রম দেখতে চেয়েছিলাম আমার জন্য। চেয়েছিলাম, আমার দিকে ধেয়ে আসা সব অবজ্ঞার জবাব দিতে। বডি-বিল্ডিং শুরু করার পর, টের পাই সেটা হচ্ছে। তাতে আমার উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।’
তখনও সাবালক হননি। সতীশ সুগার ক্ল্যাসিকস প্রতিযোগিতায় যোগ দেন নিছকই আগ্রহে। সর্বকনিষ্ঠ মহিলা বডি-বিল্ডার হিসেবে। সে বছর প্রতিযোগিতায় কিছু না হতে পারলেও, বডি-বিল্ডিংকেই নিজের সর্বস্ব দেওয়ার পণ করে বাড়ি ফেরেন। তারপর টানা এক বছর কোচ ইন্দ্রনীল মাইতির কাছে ট্রেনিং নিয়ে ফের সেই প্রতিযোগিতার মঞ্চে ফেরেন। দ্বিতীয় হয় সেখানে। ২০১৬ সালে IBBF CHAMPIONSHIP এ ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। তারপর একে একে ন্যাশনালস, আর ২০১৭র আগস্টে সোজা সিওল। মিস এশিয়া ২০১৭র প্রতিযোগিতার মঞ্চে।
তার এই পেশাতে তার বাবা-মার সম্মতি ছিলো না। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, ‘বাবা-মা প্রথম থেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে গিয়ে আমার মাথায় চাপা বডি-বিল্ডিংয়ের ভূত ছাড়ানোর চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু, আমি যে কাজটা করছি, সেটার প্রতি ভালোবাসা আর মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা দেখে এখন ওরাও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
বন্ধু সম্বন্ধে জানান, ‘আমার কোনো বন্ধু নেই। যাঁদের বন্ধু ভেবেছিলাম, তারা আমাকে ছোট করা ছাড়া আর কিছুই করেনি,’
আর বিশেষ বন্ধু সম্বন্ধে ইউরোপা লাজুক হয়ে জানান, ‘আপাতত একজনকে ডেট করছি। ও এ দেশের নয়। এবং আমার বডি-বিল্ডিংয়ের মারাত্মক ফ্যান। খুব অনুপ্রাণিত করে।
এ রাজ্যের বডি-বিল্ডিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর মত, ‘বডি-বিল্ডিং অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ এক পেশা। শুধু ট্রেনিংই নয়। নিজের শরীর গড়ে তুলতে যে খাবার খেতে হয়, তার খরচও অনেক। আমার বাড়িতেই দেখুন না, আমার একার খাবারের খরচ, গোটা পরিবারের খাবারের খরচের প্রায় পাঁচগুণ। আর স্পনসর মেলাও খুব মুশকিল,’
বাঙালি মেয়েরা কী অনুপ্রাণিত হয় তাকে দেখে? তাতে ইউরোপা বলেন, ‘আজকাল অনেকে এসে বলে বডি-বিল্ডিং করতে চায় বলে জানায় আমাকে। আমার ভালো লাগে এটা ভেবে যে, আমাকে দেখেও কেউ অনুপ্রাণিত হচ্ছে। কোনো মেয়ে বডি-বিল্ডিংয়ের জন্য সাহায্য চাইলে আমি তাঁকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। ‘
নতুন বছরে ইউরোপার লক্ষ্য হলো, আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অফ বডি-বিল্ডিং অ্যান্ড ফিটনেস (IFBB)-এর প্রো-কার্ড অর্জন করা। আর তারপর অলিম্পিয়ান হিসেবে দেশকে মেডেল এনে দেওয়ার লক্ষ্যে এগোবেন ইউরোপা।
তার ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা ছবি দেখে অনেক বাঙালী মেয়েই তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে।
– সূত্র অনুসারে , ছবিঃ ইউরোপার ইন্সটাগ্রাম
Be the first to comment