
রোজদিন ডেক্স: অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝেই সাময়িক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। টাটা মোটরসের বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। তবে কিছুটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যেও পড়তে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। একের পর এক প্রশ্নের মুখে মমতা বলেন, ‘আপনারা বিরোধিতা করলে আমি উৎসাহ পাই।’
সময় মতোই লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ ঘিরে অনুষ্ঠান। বক্তব্যের শুরু থেকেই চেনা মেজাজে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষণের শুরুতে তাঁর জীবন ঘিরে নানান লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন তিনি। ভাষণে মমতা কথা প্রসঙ্গে তুলে ধরেন রাজ্যের নানান উন্নয়নমূলক দিকের কথা। সেই সময়ই তিনি রাজ্যে বিনিয়োগ নিয়ে একটি তথ্য প্রদান করছিলেন। তাঁর ভাষণে আসে কর্মসংস্থান প্রসঙ্গ। বক্তব্যের মাঝে হটাৎই উঠে আসে টাটার প্রসঙ্গ। বাংলার শিল্পবান্ধব পরিবেশের কথা বর্ণনা করতেই সিঙ্গুর থেকে টাটা বিতাড়ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শ্রোতাদের একটা অংশ। দর্শকাসন থেকে ধেয়ে এল প্রশ্ন – ”টাটারা তো চলে গেল, এখন আর বাংলায় শিল্প কোথায়? আপনি মিথ্যে বলছেন!” সঙ্গে সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সপাট জবাব, ”ভালো করে খোঁজ নিন। বাংলা টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিস, কগনিজেন্ট আছে। আমি একটুও মিথ্যে বলছি না।” এখানেই শেষ নয়, এর পরে উঠে এল আরজি কর প্রসঙ্গও। মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিলেন, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ফলে এই নিয়ে এই মঞ্চে কথা বলা ঠিক হবে না। একই সঙ্গে বললেন, ‘এই মঞ্চকে রাজনীতির মঞ্চে পরিণত করবেন না। প্রয়োজন হলে বাংলায় এসে দেখে যান, আমি মিথ্যে বলছি না।’ এর পরেও অসন্তোষ চলতে থাকে শ্রোতাদের মধ্যে। রীতিমতো চ্যাঁচামেচি শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে আমাকে অপমান করতে পারেন না। আপনারা তো নিজেদের প্রতিষ্ঠানকেও অসম্মান করছেন। মনে রাখবেন আমি কিন্তু এখনও বিনম্র রয়েছি। এমন আচরণ করবেন না।’ এরপরেও কয়েক মিনিট চলে চিৎকার চেচামেচি তখন মমতা কার্যত রেগে যান, বলতে থাকেন, ‘এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, আমি যেখানে যাব সেখানেই গোলমাল পাকানোর চেষ্টা হবে। তবে মনে রাখবেন আমি সকলের জন্য। নির্দিষ্ট কোনও সম্প্রদায়ের জন্য নয়।’ ভাই, বোন সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, ‘প্লিজ এখানে রাজনীতি করবেন না।’ উল্টো দিক থেকে ক্রমাগত চিল চিৎকার চলতে থাকে। তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, ‘আপনি সত্য আড়াল করছেন।’ এরপরই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বিরোধিতা করলে আমি উৎসাহ পাই।’
এরপর মমতা কার্যত উচ্চ কন্ঠে বলেন, ‘এবার থেকে আমি চেষ্টা করব প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানে আসতে। আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে জানি। আমি পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নই। আমি খুশি, আমি ফিরে গিয়ে তোমাদের চকলেট পাঠাব। তোমাদের এই ধরনের আদর্শের জন্য। কতিপয় মানুষ ইচ্ছে করে ঝামেলা পাকাচ্ছো।’
এরপর মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা যায় প্রশ্নকারীদের বাম-অতি বাম বলেও উল্লেখ করতেও। বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন কীভাবে তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছিল, সেই ছবি তুলে ধরে প্রশ্নকর্তাদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এখানে মিথ্যে কথা বলে আমাকে অপমান না করে বাংলায় গিয়ে নিজেদের দলকে শক্তিশালী করুন।’
খনিকের জন্য অনুষ্ঠানে চাঞ্চল্য তৈরি হলেও, শেষমেশ বক্তব্য রেখে, ভাষণ শেষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তৃতার শেষে গোলমালের জন্য ক্ষমাও চাইলেন সঞ্চালকরা।
Be the first to comment