‘দল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার সমর্থন করে না।’ এক ব্যক্তি এক পদ নীতি নিয়ে তৃণমূল যুব নেতাদের ফেসবুকে পোস্টের প্রেক্ষিতে বললেন তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “এক ব্যক্তি এক পদ নেত্রী অনুমোদন করেন না। সভানেত্রী নতুন ভাবে নীতি নির্ধারণ করবেন। দলনেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”
বৃহস্পতিবার রাতে যুব তৃণমূলের এক অন্যতম নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের একটি ফেসবুক পোস্ট। আর তারপর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি ফেসবুক পোস্ট। যা শোরগোল ফেলে দেয় রাজ্য রাজনীতিতে। অস্বস্তি বাড়ে তৃণমূল শিবিরেও। রাত বাড়তে বদলে যেতে থাকে যুব তৃণমূল নেতাদের ফেসবুকের কভার ফটো। সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলন প্রতীয়মান হতে থাকে।
প্রত্যেকেই সওয়াল করেন এক ব্যক্তি এক পদ নীতি নিয়ে। আর তাঁদের বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাতলে দেওয়া নীতি। যুব তৃণমূল নেতাদের কভার ফটোতে যে বার্তা, তাতে দৃশ্যত পেশাদারিত্বের ছাপ স্পষ্ট। লেখা, ‘আই সাপোর্ট ওয়ান পার্সন ওয়ান পোস্ট ইন এআইটিসি।’
এদিন ফিরহাদ হাকিমকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সভানেত্রীর সিদ্ধান্তই আমাদের দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এটাই সর্বধার্য। আমাদের নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, দলে সেই সিদ্ধান্তই হবে। দলে আমরা সেই প্রতিশ্রুতিও নিয়েছিলাম। তাই এই ধরনের পোস্টের অনুমোদন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দেয় না। সোশ্যাল মিডিয়ায় আজ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্যাম্পেন হচ্ছে।”
দলের অনেক পদাধিকারীও এই ধরনের পোস্টকে সমর্থন করেছেন, সেই প্রসঙ্গের প্রেক্ষিতে ফিরহাদ বলেন, “এই দল অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। এই দলের পুরোটাই আমরা সভানেত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। দল চালানোর জন্য যখন যেটা দরকার, সভানেত্রী সেটা করবেন আবার চেঞ্জও করতে পারেন। এটা কোনও ভুল বোঝাবুঝি নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর আস্থা রেখেই দল চলে।” ব্যানার্জি পরিবারেরও অনেকে এই ধরনের পোস্ট করেছেন, তার প্রেক্ষিতে ফিরহাদ বলেন, “দলের স্বার্থে এই ধরনের পোস্ট নয়। দল এটাকে অনুমোদন দিচ্ছে না। সভানেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”
প্রসঙ্গত, পুরভোটে দ্বিগুণ কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে নির্বাচন করানোর দাবি জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। তাতেও চর্চা বর্তমানে তুঙ্গে। সে প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, “দেবাংশু আমার অত্যন্ত স্নেহের ছেলে। নিশ্চিতভাবে একটা কিছু পোস্ট সে করেছে। সন্ত্রাস তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন করে না। মানুষের যে রায়, সেই রায় তৃণমূল মাথা পেতে নেয়। তৃণমূল স্ট্রিক্ট মানুষের রায়ের ওপরই আমাদের জয় হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও যে উপনির্বাচন হয়েছে, তাতে আলাদা কিছু হয়নি।” ব্যানার্জি পরিবারকে নিয়ে বিরোধীদের এত মাথাব্যথার কারণ নেই বলেও স্পষ্ট বার্তা দেন ফিরহাদ।
প্রসঙ্গত, এই ইস্যুতে তৃণমূল শিবিরে এখন আড়াআড়ি বিভাজন স্পষ্ট। অন্তত তেমনটাই বলছে সামাজিক মাধ্যমে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতিকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে ‘এক পদ এক ব্যক্তি’ লেখা পোস্ট করেছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। অভিষেকের ভাই। একই পথে হেঁটে পোস্ট করেছেন পরিবারের আরেক সদস্য অদিতি গায়েনও। তিনি অভিষেকের পিসির মেয়ে। শুধু আকাশ বা অদিতিই নয়। এক পদ এক ব্যক্তিকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্যও। কভার ফটো বদলে এই নীতিকে সমর্থন জানাচ্ছেন দলের একাধিক যুব নেতা। সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলন প্রতীয়মান। ফিরহাদ জানিয়েছেন, প্রত্যেককে এই পোস্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হবে। কিন্তু আদৌ সেই পোস্ট সরবে কিনা, সেটাই দেখার।
Be the first to comment