রোজদিন ডেস্ক :- গেরুয়া শিবিরে কী ধাক্কা দিতে চলেছে জোড়াফুল শিবির? সেটাও রাজ্যের ৬ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রেক্ষাপটে! জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যজুড়ে। কেননা উত্তরবঙ্গে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লার বাড়িতে মঙ্গলবার হাজির হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক দীপেন প্রামাণিক ও তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র দুলাল দেবনাথ। ২ হেভিওয়েট নেতার উপস্থিতির জেরেই রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে বার্লা এবার আসছেন তৃণমূলে। এমনকি মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাঁর অনুগামীদের সমর্থন তৃণমূল প্রার্থী পেতে চলেছে বলেও জল্পনা ছড়িয়েছে। এমনকি এটাও শোনা যাচ্ছে, বার্লা তৃণমূলে এলে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হতে পারে বা ২০২৬’র বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে জিতলে থাকছে রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাও। কার্যত জল্পনাকে আরও গাঢ় করে দিয়েছেন তৃণমূলের দুই নেতা।
বার্লা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে ২০১৯ সালে পেয়েছিলেন লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করার টিকিট। পদ্মশিবির থেকেই তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। উনিশের ভোটে জিতে তিনি সাংসদ হলেও এলাকার উন্নয়নে তাঁকে কোনওদিনই সেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায়নি। এমনকি দলের সভা, মিছিল, মিটিংয়েও তাঁর দেখা পাওয়া যেত না বলেই বিজেপির নীচুতলার কর্মীদের অভিযোগ ছিল। পরে বার্লাকে কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রীও করা হয়। কিন্তু ছবি বদলায়নি। বার্লা বিজেপিতে থেকেও বিজেপিরই নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব রেখে গিয়েছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি আর তাঁকে টিকিট দেয়নি। বার্লার পরিবর্তে টিকিট পান মনোজ টিগ্গা। ভোটে জিতে তিনি বিধায়ক থেকে সাংসদও হয়ে যান। টিগ্গার ছেড়ে দেওয়া মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রর উপনির্বাচনে বিজেপি আবার প্রার্থী করেছে প্রাক্তন বাম নেতা তারকেশ্বর লোহারের ছেলেকে যা নিয়ে চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ রয়েছে। চা-বাগানের রাজনীতিতে বার্লার প্রভাব এখনও বেশ ভালই। সেটা বুঝেই এবার বার্লার বাড়িতে তৃণমূলের নেতাদের আগমন।
ঘটনা হচ্ছে, মাদারিহাটের উপনির্বাচনে বার্লাকে দেখাই যাচ্ছে না প্রচার করতে। এর নেপথ্যের কারণ হিসাবে বার্লা দাবি করেছেন, ‘মাদারিহাট উপনির্বাচনে আমার দুদিকে দুই ভাই, একদিকে গোর্খা একদিকে আদিবাসী, আমি ময়দানে নামলে গোর্খা আদিবাসী রাগ করবে। ২৬-এ নির্বাচন আছে, ওদেরকে যদি খেপিয়ে দিই, তাহলে ওরা আমাদের কীভাবে ভোট দেবে?’ কিছুদিন আগেই জন বার্লার বোন মেরিনা কুজু তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুলকাপাড়া এলাকা থেকে বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত হন মেরিনা। ভাল ব্যবধানেই জয়ী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে বিজেপি তাঁকে টিকিট দেয়নি। তারপরই তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। বার্লা অবশ্য এদিন সেই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে মনোজের নাম না করে বেশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘এখানে ওয়ান আর্মি হিসেবে চলছে। কারও সঙ্গে কোনও কথা না বলেই চলছে। আপনারা বুঝবেন কাকে বলছি। এখন আমাকে ছাড়া জিতলে ভালো, চা বাগানের মানুষকে নিয়ে না চললে কেন তাঁরা বিশ্বাস করবে?’
দলের রাজ্য থেকে জেলা নেতৃত্ব নিয়েও বেশ ক্ষোভ রয়েছে বার্লার। সেই প্রসঙ্গে এদিন তিনি জানিয়েছেন, ‘কলকাতার নেতৃত্ব আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির নেতাদের গুরুত্বই দেয় না। কমিটিতেও রাখে না। যার জেরে বিজেপির ফলাফল ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। সুকান্ত মজুমদার এসেছিলেন আমার বাড়িতে, আমি বলেছি এই লিডারশিপ থাকলে কাজ করা যাবে না। সব ভেঙে দিয়েছে। দীপেন প্রামানিক আমার পুরনো প্রেসিডেন্ট ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলার। উনি আসবেন বলেছিলেন, তাই এসেছেন। আমরা কথা বললাম। দলবদলের কোনও চিন্তা করিনি।’ তবে বার্লার দলবদলের সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে এদিন দুলাল দেবনাথ জানিয়েছেন, ‘আমাদের কোনও সেটিংয়ের দরকার পড়ে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন-আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যদি জন বার্লা মনে করেন, তৃণমূলে আসবেন, তাহলে আসবেন।’ কার্যত বার্লার বাড়িতে এই তৃণমূলের দুই নেতার আসা ও বৈঠক করা গেরুয়া শিবিরের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। বার্লা দল ছাড়লে চা-বাগান এলাকায় বিজেপি ধাক্কা খেতে বাধ্য সেটা পদ্মনেতারা বিলক্ষণ জানেন।
Be the first to comment